ঢাকা ০৭:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
লক্ষ্মীপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট সংস্কার সাতক্ষীরা উপকূলে বিশ্ব জলবায়ু ধর্মঘট কর্মসূচী পালিত বালিয়াকান্দিতে এ্যাসেডের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচী পালিত ভোলা প্রেসক্লাবে গনমাধ্যম কর্মীদের সাথে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মত বিনিময়  আত্রাইয়ে মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ নাগেশ্বরী উপজেলা বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের কমিটি গঠন পত্রিকার প্রকাশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠের প্রকাশকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান পাইকগাছায় দু’পক্ষের বিরোধ ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের ৩জন গুরুতর জখম রাজবাড়ীতে শিক্ষকদের লাঞ্চিতের প্রতিবাদে মানববন্ধন

রাজধানীর মিরপুরের সড়ক যেনো মৃত্যুফাঁদ

রাজু আহমেদ-স্টাফ রিপোর্টার:
  • আপডেট সময় : ০৫:০৬:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩ ১৪০ বার পঠিত

অনুন্নত সড়ক,অদক্ষ চালক,ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন,জনসচেতনতার অভাব, অদক্ষ চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে দিন দিন প্রাণঘাতী সড়ক দূর্ঘটনার হার ও প্রাণহানির সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ঢাকার গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন শিপিং এন্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার ফোরাম (এসসিআরএফ) নামক একটি সংগঠনের পর্যবেক্ষণ ও জরিপের তথ্যসূত্রে জানা গেছে,চলতি বছরের প্রথম তিনমাসে সারাদেশে ১ হাজার ৩০২ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ১ হাজার ৪৮৪ জন নিহত হওয়ার সাথে সাথে আহত হয়েছে ২ হাজার ৪৮৫ জন। সেই হিসেবে দেশে গড়ে প্রতিদিন ১৪ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ১৬ জনের (১৬.৪৮) প্রাণহানি ঘটেছে।

অপরদিকে,রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচলে ডিএমপির পক্ষ থেকে বিশেষ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সড়কগুলোতে বাস্তবে সেই নিষেধাজ্ঞা পালনে নেই প্রয়োজনীয় কোনো কার্যকর ব্যবস্থা। যাত্রীসেবার নামে রাজধানীতেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ, ফিটনেসবিহীন হাজার হাজার যাত্রীবাহী পরিবহন।

গাদাগাদি করে তুলে অধিক যাত্রী পরিবহন,এমনকি চালকের পাশের আসনেও দু’তিনজন যাত্রী তোলা হচ্ছে নিয়মবহির্ভূতভাবে। তদুপরি সর্বোচ্চ ঝুঁকি জেনেও যানবাহনের দরজায় দাড়িয়ে ঝুলে ঝুলেই যাত্রী পরিবহনের চিত্র হরহামেশা দেখা যাচ্ছে।

একদিকে যাত্রীরা আগে ওঠার প্রতিযোগিতা ভিত্তিতে হুরমুর করে উঠছেন গাড়িতে। অন্যদিকে এসকল যাত্রীবাহী পরিবহনের চালকেরাও কে কার আগে যাবে কিংবা কে কাকে পেছনে আটকে সামনের যাত্রী তুলবে; পুরো সড়কজুড়ে এমন অসুস্থ প্রতিযোগিতাও চলছে সারাক্ষণ! যত্রতত্র নিয়মবহির্ভূতভাবে যাত্রী ওঠানামা ও অনিয়ন্ত্রিত গতির ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রায়শই অসহনীয় যানযটে পথচারীদেরও নাভিশ্বাস অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় প্রতিনিয়তই ঘটছে প্রাণহানির মতো ঘটনা। ফলস্বরূপ মৃত্যুর মিছিলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর তুলনায় কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই রাজধানীর মিরপুরের সড়কগুলো। ঢাকা মহানগরীর সড়কগুলোতে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল যেনো থামছেইনা। মিরপুরের সড়কগুলো যেনো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।

গত কয়েকমাসে মিরপুরের সড়কের নির্দিষ্ট এলাকাতেই আলোচিত বেশ কয়েকটি সড়ক দূর্ঘটনায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মর্মান্তিক মৃত্যুতে গোটা মিরপুর জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। ফলে বাসা থেকে অজানা আতংককে সংগে নিয়েই দৈনন্দিন কর্মযজ্ঞে বের হন মিরপুরবাসী।

উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ রাজধানীর মিরপুরের রুপনগর বেড়ীবাঁধের বিরুলিয়া এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হন ফুল ব্যবসায়ী আলিমুদ্দীন (৫০) নামে এক ব্যাক্তি। পরে মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরদিন (২৯ মার্চ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এঘটনার সপ্তাহখানেক আগে অর্থাৎ গত ২৩ মার্চ আনুমানিক দুপুর ১.৩০ মিনিটে মিরপুরের ব্যস্ততম এলাকা মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের সামনের সড়কে একটি পিক-আপের চাকায় পিষ্ট হয়ে শাফিম আহমেদ ভুঁইয়া (২৭) নামে মোটরসাইকেল আরোহী তরতাজা এক যুবক মর্মান্তিকভাবে আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা দ্রুত মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত শাফিম আহমেদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বুগীর গ্রামের শাহজাহান ভুঁইয়ার ছেলে। তিনি পরিবারের সাথে মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোডের রাইনখোলা এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন।

এঘটনার মাত্র সপ্তাহ তিনেক আগে,গত ৬ মার্চ বেলা ১১ টার দিকে মিরপুর-১ নম্বরের মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে মিডওয়ে আইল্যান্ড পাড় হয়ে আসার সময় বিপরীত দিকে থেকে আসা সিটি করপোরেশনের গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তৈয়ব আলী (২৬) নামে এক ব্যবসায়ীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। নিহত কাপড় ব্যবসায়ী তৈয়ব আলী নরসিংদীর শিবপুরের শিবপুর গ্রামের আবু হানিফের ছেলে।

গত ১৭ মার্চ মিরপুরে এক বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে মোটরসাইকেল চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের বসায় ফেরার পথে রাত আনুমানিক ২টার দিকে বিচারপতি বাসভবনের সামনে উল্টোদিক থেকে আসা বেপরোয়া গতির একটি ট্রূক তাকে চাপা দেয়। গুরুতর আহত াঅবস্থায় উদ্ধার করে লিমনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এঘটনায় নিহত লিমবের বাড়ি মানিকগঞ্জে। তিনি নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া বালুরমাঠ এলাকায় ব্যাটারির ডিলারশিপের ব্যবসা করতেন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মিরপুর-২ নম্বর সেকশনের জনতা হাউজিংয়ের ৩ নম্বর সড়কের ভাড়া বাসার গলির মুখে বড় ভাই ফাহিমের (১২) হাত ধরে খেলছিলো ১৯ মাস বয়সী শিশু সাকিবুল। খেলাধুলার এক পর্যায়ে হঠাৎ বড় ভাই ফাহিমের হাত থেকে ছুটে রাস্তার দিকে দৌড় দেয় সে। এসময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগামী প্রাইভেটকার তাকে চাপা দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নিকটতম ডেল্টা হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাচানো সম্ভব হয়নি শিশু সাকিবুলকে।

গত ১৮ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে মিরপুরের টেকনিক্যাল মোড় থেকে একটি রিকশাযোগে মিরপুর -১ নম্বরে আসার পথে মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে বিআরটিসির একটি বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মায়ের সামনেই মর্মান্তিক মৃত্যু হয় রাইসা নামে ২ বছর বয়সী এক কণ্যাশিশুর। এঘটনায় ঘাতক বিআরটিসি বাসটির চালক আলামিনকে(৩৬) আটক ও ঘাতক বাসটিকে জব্দ করে পুলিশ।নিহত শিশু রাইসাদের বাসা মিরপুরের শাহ্ আলীবাগে।

এবিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী এ্যাড. ফিরোজ আলী মন্ডল বলেন,একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না। ক্রমবর্ধমান সড়ক দূর্ঘটনা ও প্রাণহানি আমাদের দেশে বর্তমানে জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বহু মূল্যবান জীবন অকালে ঝরে পড়া রোধ ও কাঙ্খিত নিরাপদ সড়কের বাস্তবায়ন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। ফলে সড়ক দূর্ঘটনা রোধে জনসচেতনতাই প্রধান প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করতে পারে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পূর্বে তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা ভালোভাবে যাচাই বাছাই করতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলে বাস্তবায়ন করতে হবে পূর্ণ আইনী নিষেধাজ্ঞা। পরিকল্পিত ট্রাফিক আইন চালু,রাস্তা-ঘাট প্রশস্তকরণ,প্রতিনিয়ত চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক ও জরিমানার ব্যবস্থা,ধারণ ক্ষমতর বাইরে যানবাহনে অতিরিক্ত মালামাল ও যাত্রী বহন,বেপরোয়া ও প্রতিযোগিতাভিত্তিক গাড়ি চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ নানাবিধ এসকল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাই পারে ‘সড়ক দূর্ঘটনা’ হ্রাস করতে। স্বরাষ্ট্র, যোগাযোগ এবং আইন মন্ত্রণালয় আরো সক্রিয় হলে সড়ক দূর্ঘটনা বহুলাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে বলেও মতপ্রকাশ করেন এই আইনজীবী।

এবিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মুনিবুর রহমান বলেন,প্রতিটি সড়ক দূর্ঘটনাই সকলের অনাকাঙ্ক্ষিত। সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুহার কমাতে ট্রাফিক পুলিশ সর্বদাই বিশেষভাবে সচেতন। তবে ঢাকা মহানগরীর সড়কগুলোতে অনাকাঙ্ক্ষিত সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যু ঠেকাতে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পুলিশের একার পক্ষে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সড়কপথে ভ্রমণ,যাত্রীবাহী যানবাহনে চলাফেরার ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ চালকদের উচিৎ বেশি বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা। তবে ভবিষ্যতে ঢাকা মহানগরীর সড়কগুলোতে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনারোধে কার্যকর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা।

ট্যাগস :

রাজধানীর মিরপুরের সড়ক যেনো মৃত্যুফাঁদ

আপডেট সময় : ০৫:০৬:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩

অনুন্নত সড়ক,অদক্ষ চালক,ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন,জনসচেতনতার অভাব, অদক্ষ চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে দিন দিন প্রাণঘাতী সড়ক দূর্ঘটনার হার ও প্রাণহানির সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ঢাকার গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন শিপিং এন্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার ফোরাম (এসসিআরএফ) নামক একটি সংগঠনের পর্যবেক্ষণ ও জরিপের তথ্যসূত্রে জানা গেছে,চলতি বছরের প্রথম তিনমাসে সারাদেশে ১ হাজার ৩০২ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ১ হাজার ৪৮৪ জন নিহত হওয়ার সাথে সাথে আহত হয়েছে ২ হাজার ৪৮৫ জন। সেই হিসেবে দেশে গড়ে প্রতিদিন ১৪ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ১৬ জনের (১৬.৪৮) প্রাণহানি ঘটেছে।

অপরদিকে,রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচলে ডিএমপির পক্ষ থেকে বিশেষ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সড়কগুলোতে বাস্তবে সেই নিষেধাজ্ঞা পালনে নেই প্রয়োজনীয় কোনো কার্যকর ব্যবস্থা। যাত্রীসেবার নামে রাজধানীতেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ, ফিটনেসবিহীন হাজার হাজার যাত্রীবাহী পরিবহন।

গাদাগাদি করে তুলে অধিক যাত্রী পরিবহন,এমনকি চালকের পাশের আসনেও দু’তিনজন যাত্রী তোলা হচ্ছে নিয়মবহির্ভূতভাবে। তদুপরি সর্বোচ্চ ঝুঁকি জেনেও যানবাহনের দরজায় দাড়িয়ে ঝুলে ঝুলেই যাত্রী পরিবহনের চিত্র হরহামেশা দেখা যাচ্ছে।

একদিকে যাত্রীরা আগে ওঠার প্রতিযোগিতা ভিত্তিতে হুরমুর করে উঠছেন গাড়িতে। অন্যদিকে এসকল যাত্রীবাহী পরিবহনের চালকেরাও কে কার আগে যাবে কিংবা কে কাকে পেছনে আটকে সামনের যাত্রী তুলবে; পুরো সড়কজুড়ে এমন অসুস্থ প্রতিযোগিতাও চলছে সারাক্ষণ! যত্রতত্র নিয়মবহির্ভূতভাবে যাত্রী ওঠানামা ও অনিয়ন্ত্রিত গতির ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রায়শই অসহনীয় যানযটে পথচারীদেরও নাভিশ্বাস অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় প্রতিনিয়তই ঘটছে প্রাণহানির মতো ঘটনা। ফলস্বরূপ মৃত্যুর মিছিলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর তুলনায় কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই রাজধানীর মিরপুরের সড়কগুলো। ঢাকা মহানগরীর সড়কগুলোতে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল যেনো থামছেইনা। মিরপুরের সড়কগুলো যেনো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।

গত কয়েকমাসে মিরপুরের সড়কের নির্দিষ্ট এলাকাতেই আলোচিত বেশ কয়েকটি সড়ক দূর্ঘটনায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মর্মান্তিক মৃত্যুতে গোটা মিরপুর জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। ফলে বাসা থেকে অজানা আতংককে সংগে নিয়েই দৈনন্দিন কর্মযজ্ঞে বের হন মিরপুরবাসী।

উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ রাজধানীর মিরপুরের রুপনগর বেড়ীবাঁধের বিরুলিয়া এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হন ফুল ব্যবসায়ী আলিমুদ্দীন (৫০) নামে এক ব্যাক্তি। পরে মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরদিন (২৯ মার্চ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এঘটনার সপ্তাহখানেক আগে অর্থাৎ গত ২৩ মার্চ আনুমানিক দুপুর ১.৩০ মিনিটে মিরপুরের ব্যস্ততম এলাকা মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের সামনের সড়কে একটি পিক-আপের চাকায় পিষ্ট হয়ে শাফিম আহমেদ ভুঁইয়া (২৭) নামে মোটরসাইকেল আরোহী তরতাজা এক যুবক মর্মান্তিকভাবে আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা দ্রুত মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত শাফিম আহমেদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বুগীর গ্রামের শাহজাহান ভুঁইয়ার ছেলে। তিনি পরিবারের সাথে মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোডের রাইনখোলা এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন।

এঘটনার মাত্র সপ্তাহ তিনেক আগে,গত ৬ মার্চ বেলা ১১ টার দিকে মিরপুর-১ নম্বরের মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে মিডওয়ে আইল্যান্ড পাড় হয়ে আসার সময় বিপরীত দিকে থেকে আসা সিটি করপোরেশনের গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তৈয়ব আলী (২৬) নামে এক ব্যবসায়ীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। নিহত কাপড় ব্যবসায়ী তৈয়ব আলী নরসিংদীর শিবপুরের শিবপুর গ্রামের আবু হানিফের ছেলে।

গত ১৭ মার্চ মিরপুরে এক বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে মোটরসাইকেল চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের বসায় ফেরার পথে রাত আনুমানিক ২টার দিকে বিচারপতি বাসভবনের সামনে উল্টোদিক থেকে আসা বেপরোয়া গতির একটি ট্রূক তাকে চাপা দেয়। গুরুতর আহত াঅবস্থায় উদ্ধার করে লিমনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এঘটনায় নিহত লিমবের বাড়ি মানিকগঞ্জে। তিনি নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া বালুরমাঠ এলাকায় ব্যাটারির ডিলারশিপের ব্যবসা করতেন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মিরপুর-২ নম্বর সেকশনের জনতা হাউজিংয়ের ৩ নম্বর সড়কের ভাড়া বাসার গলির মুখে বড় ভাই ফাহিমের (১২) হাত ধরে খেলছিলো ১৯ মাস বয়সী শিশু সাকিবুল। খেলাধুলার এক পর্যায়ে হঠাৎ বড় ভাই ফাহিমের হাত থেকে ছুটে রাস্তার দিকে দৌড় দেয় সে। এসময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগামী প্রাইভেটকার তাকে চাপা দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নিকটতম ডেল্টা হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাচানো সম্ভব হয়নি শিশু সাকিবুলকে।

গত ১৮ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে মিরপুরের টেকনিক্যাল মোড় থেকে একটি রিকশাযোগে মিরপুর -১ নম্বরে আসার পথে মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে বিআরটিসির একটি বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মায়ের সামনেই মর্মান্তিক মৃত্যু হয় রাইসা নামে ২ বছর বয়সী এক কণ্যাশিশুর। এঘটনায় ঘাতক বিআরটিসি বাসটির চালক আলামিনকে(৩৬) আটক ও ঘাতক বাসটিকে জব্দ করে পুলিশ।নিহত শিশু রাইসাদের বাসা মিরপুরের শাহ্ আলীবাগে।

এবিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী এ্যাড. ফিরোজ আলী মন্ডল বলেন,একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না। ক্রমবর্ধমান সড়ক দূর্ঘটনা ও প্রাণহানি আমাদের দেশে বর্তমানে জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বহু মূল্যবান জীবন অকালে ঝরে পড়া রোধ ও কাঙ্খিত নিরাপদ সড়কের বাস্তবায়ন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। ফলে সড়ক দূর্ঘটনা রোধে জনসচেতনতাই প্রধান প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করতে পারে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পূর্বে তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা ভালোভাবে যাচাই বাছাই করতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলে বাস্তবায়ন করতে হবে পূর্ণ আইনী নিষেধাজ্ঞা। পরিকল্পিত ট্রাফিক আইন চালু,রাস্তা-ঘাট প্রশস্তকরণ,প্রতিনিয়ত চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক ও জরিমানার ব্যবস্থা,ধারণ ক্ষমতর বাইরে যানবাহনে অতিরিক্ত মালামাল ও যাত্রী বহন,বেপরোয়া ও প্রতিযোগিতাভিত্তিক গাড়ি চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ নানাবিধ এসকল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাই পারে ‘সড়ক দূর্ঘটনা’ হ্রাস করতে। স্বরাষ্ট্র, যোগাযোগ এবং আইন মন্ত্রণালয় আরো সক্রিয় হলে সড়ক দূর্ঘটনা বহুলাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে বলেও মতপ্রকাশ করেন এই আইনজীবী।

এবিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মুনিবুর রহমান বলেন,প্রতিটি সড়ক দূর্ঘটনাই সকলের অনাকাঙ্ক্ষিত। সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুহার কমাতে ট্রাফিক পুলিশ সর্বদাই বিশেষভাবে সচেতন। তবে ঢাকা মহানগরীর সড়কগুলোতে অনাকাঙ্ক্ষিত সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যু ঠেকাতে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পুলিশের একার পক্ষে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সড়কপথে ভ্রমণ,যাত্রীবাহী যানবাহনে চলাফেরার ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ চালকদের উচিৎ বেশি বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা। তবে ভবিষ্যতে ঢাকা মহানগরীর সড়কগুলোতে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনারোধে কার্যকর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা।