ঢাকা ০৬:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ভোলা প্রেসক্লাবে গনমাধ্যম কর্মীদের সাথে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মত বিনিময়  আত্রাইয়ে মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ নাগেশ্বরী উপজেলা বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের কমিটি গঠন পত্রিকার প্রকাশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠের প্রকাশকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান পাইকগাছায় দু’পক্ষের বিরোধ ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের ৩জন গুরুতর জখম রাজবাড়ীতে শিক্ষকদের লাঞ্চিতের প্রতিবাদে মানববন্ধন গোয়ালন্দ পাক দরবার শরিফ নিয়ে গুজব ছড়ানো সংবাদের প্রতিবাদ প্রথমবারের মতো সেনাসদর পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংসদ থেকে যত টাকা খোয়া গেছে

প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, থানায় লিখিত অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
  • আপডেট সময় : ০৯:০৮:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০২৩ ৪৬৫ বার পঠিত

শিলা আক্তার (৪০)। রহস্যময়ী এই নারী ইতোপূর্বে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন একাধিকবার। ১৩ ও ৬ বছর বয়সী দুটি কণ্যা সন্তানও রয়েছে তার। অন্যদিকে পূর্বের স্বামী-সন্তানের পরিচয় গোপন করে নিজেকে কুমারী পরিচয়ে বিকাশ ব্যবসায়ী যুবকের সঙ্গে গভীর প্রেমে আবদ্ধ। এরপর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় দশ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে উল্টো শাহাদাত নামে ওই যুবককে মিথ্যা ধর্ষণের মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানোর ভয় দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এঘটনায় আত্মসাতকৃত অর্থ উদ্ধারসহ উপযুক্ত বিচারের দাবি তুলে শিলা (৪০) নামে ওই প্রতারক নারীর বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন শাহাদাৎ নামে ভুক্তভোগী ওই যুবক।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী শাহাদাত জানান জানান,সম্প্রতি সাভার মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জানতে পেরে শাহাদাতের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২০ জুন (মঙ্গলবার) নারায়নগঞ্জের চাষাড়া এলাকাকার স্থানীয় কিছু চিহ্নিত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে শাহাদাতের নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ার বাসায় হাজির হন শিলা। শিলার উপস্থিতিতেই স্থানীয় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা পুলিশি অভিযোগ তুলে নিতে শাহাদাতকে হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করেন। অন্যথায় সন্ত্রাসীর তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিলে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম আতংকে রয়েছেন বলেও জানান শাহাদাত।

এদিকে,সাভার মডেল থানার লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী যুবক শাহাদাত হোসেনের বর্ণনা সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের আগষ্ট মাসে সাভার উপজেলাধীন বিরুলিয়া ইউনিয়নের আকরাইন গ্রামের শিলা নামের (৪০) সেই নারীর সাথে রং নাম্বারে পরিচয় ঘটে শাহাদাতের। তিনি নারায়নগঞ্জের চাষাড়া এলাকার বিকাশ ব্যবসায়ী।

মুঠোফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে শিলার পূর্বনির্ধারিত স্থান হিসেবে বিরুলিয়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় প্রথম সাক্ষাৎলাভের পর তাদের সম্পর্কের মাত্রা মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায় ছাপিয়ে ঐকান্তিক এক গতিপথ সৃষ্টির সাথে সাথে শুরু হয় দুটি হৃদয়ের ভাব-বিনিময়! চুড়ান্ত পর্যায়ে দুটি হৃদয়ের ঐকান্তিক সম্মতির পরিনামে প্রেমের সম্পর্কে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়ার এক পর্যায়ে একে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে বদ্ধপরিকর দুটি মন! এরই মধ্যে শিলা শাহাদাতকে নিয়ে উত্তরখান এলাকায় বিপুল নামে এক ব্যাক্তির বাসায় নিয়ে যান। মামাতো ভাই ও অভিভাবক পরিচয়ে বিপুলের বাসাতেই বিয়েসাদীর বিষয়ে কথা হয় তাদের। গত মে মাসের ২৫ তারিখ বিয়ের দিন ধার্য করা হয়।
নিজের ক্ষুদ্র বিকাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আশপাশের একটি পরিচিত জুয়েলারির দোকান থেকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ভাবি স্ত্রীর পছন্দই স্বর্ণের দুই জোড়া কানের দূলের সঙ্গে সঙ্গে একটি আংটিও কিনে ফেলেন। স্বতঃস্ফূর্ত মনে ভাবি স্ত্রী শিলার জন্যে গহনা কিনতে এর পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর স্বর্ণের চেইন কিনতে এক লক্ষ টাকা দেন তিনি।

শহাদাত আরো জানান,পরদিনই শিলার (২৭) চোখে সমস্যার কথা উল্লেখ করে তার মুঠোফোনে ফোন করে কান্নাকাটি জুড়ে দেন। আগামীকালই তার চোখ অপারেশন করাতে হবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তার। অন্যথায় সে আর কোনোদিনই চোখে দেখতে পাবে না।
সেদিনও তাকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আরো পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠান তিনি।

এরপর থেকে প্রায় প্রতিনিয়তই নানা সমস্যা যেনো পিছু ছাড়েনা শিলার। তার আকরাইনের ছয় শতাংশ জমির তিন শতাংশ জমি বিক্রির চেষ্টা চলছে। জমি বিক্রি হওয়ার সাথে সাথেই শাহাদাতকে তার সমস্ত টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিয়ম করে ধার হিসেবে বিভিন্ন অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয় শিলা।

তার সুচারু অভিনয়, ছলচাতুরী ও প্রেমের মোহে অন্ধ হয়ে আগে-পিছে কোনো কিছু না ভেবেই দু-একদিন পরপরই শিলার ব্যবহৃত বিকাশ পার্সোনাল একাউন্টসহ বিভিন্নভাবে বিভিন্ন অংকের অর্থ দিতেই থাকেন শাহাদাত।

একপর্যায়ে হঠাৎ ব্যবসায়িক প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে ভাবি স্ত্রী শিলাকে গত মে মাসের মাঝামাঝিতে ফোন করে তার কাছে আপাততঃ পঞ্চাশ হাজার টাকা ফেরত চাইলে কোনো টাকা দিতে পারবে না বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় সে। শিলার আচরণে হঠাৎ এমন রহস্যময় পরিবর্তন লক্ষ্য করে তাৎক্ষণিকভাবে নিজের প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি আন্দাজ করেন শাহাদাত। আরো একবার ফোন করে তার সমস্যা জানিয়ে ফের পঞ্চাশ হাজার টাকা ফেরত চাইলে, ‘কিসের টাকা,সে কোনো টাকাই নেয়নি’ বলে শিলার কর্কশ জবাবে বুক কেঁপে ওঠে শাহাদাতের!
মাথায় হাত দিয়ে হিসেব মিলিয়ে শাহাদাত অগত্যা বুঝতে পারেন, বিগত দীর্ঘ আট মাস যাবত নিয়মিত ভাবি স্ত্রী শিলা জমি বিক্রি করে ফেরত দিবে জানিয়ে বিভিন্ন অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতে নিতে তার ছোট্ট বিকাশ এজেন্ট ব্যবসায় পুঁজি হিসেবে খাটানো প্রায় লাখ দশেক টাকার পুরোটাই যে কব্জা করে নিয়েছে!

উপায়ন্তর না পেয়ে শাহাদাত শিলার মামাতো ভাই উত্তরখান এলাকার বিপুলের সাথে যোগাযোগ করলে বিপুলও জানায়,শিলা তার কোনো মামাতে বোন নয়;ব্যবসায়িক সূত্রে পরিচিত মাত্র।

সর্বশেষ বিয়ের ধার্য তারিখের এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ গত ১৮ মে সরাসরি শিলার আকরাইনের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন শাহাদাত। কিন্ত শিলা তার সাথে অশালীন ব্যবহার করে তাকে তার বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে; অন্যথায় লোকজন ডেকে তাকে মারধরের ভয়ভীতিও প্রদর্শন করে।

ভুক্তভোগী শাহাদাত জানান,কারণ হিসেবে নেপথ্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে আশপাশের লোকজনদের জিজ্ঞেস করতেই বহুরুপী নারী শিলার আসল পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হন শাহাদাত। আসলে দীর্ঘ আট মাস যার ছলনায় মত্ত হয়ে গভীর প্রেমে মগ্ন ছিলেন, ভাবি স্ত্রী হিসেবে শীঘ্রই বিয়ের পীড়িতে বসবেন বলে নিজের সর্বস্ব উজার করে দিয়েছেন; শিলা নামের সেই নারী বিবাহিত। দশ-বারো বছরের একটি কণ্যাসন্তানও রয়েছে তার। ভাবতেই শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু হিম হয়ে আসে তার।

আরো খোঁজখবর নিয়ে শাহাদাত জানতে পারেন,আয়ের উৎস হিসেবে দৃশ্যমান কোনো পেশা না থাকলেও লোকদেখানো সূদ ব্যবসার অন্তরালে প্রধানত দেহব্যবসার সাথে সাথে টার্গেটকৃত সুদর্শন ও বিত্তশালী পুরুষদের সাথে কথিত প্রেমের সম্পর্ক গড়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণাই বহুরুপী এই নারীর মূল পেশা। তার প্রতারণার জালে জড়িয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন ডজন খানেক পুরুষ। এমনকি তার ছলনা ও প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পাননি খোদ পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা।

শাহাদাত জানান,মিরপুরের রুপনগর আবাসিক এলাকায় বসবাসকালীন সময়ে হেলাল নামে এক গার্মেন্টস কর্মীর সাথে বিয়ে হয় শিলার। তার নিয়ন্ত্রণহীন স্বেচ্ছাচারী উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে বেশি দিন সে সংসার টেকেনি। এরপর মাসুদ নামে এক ব্যাক্তির সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিয়ে করে সে। বহুগামী নারী শিলার অসামাজিক কার্যকলাপে বিরক্ত ও অতিষ্ঠ হয়ে সামাজিক সম্মানের ভয়ে দ্বিতীয় স্বামী মাসুদও তাকে ফেলে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। বর্তমানে শিলা একজন পেশাদার দেহব্যবসায়ী-ভয়ংকর এক প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য।
আকরাইনের জমি-বাড়িটিও তার নিজের টাকায় কেনা নয়। সেটিও পুলিশের এক কর্মকর্তাকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে সুকৌশলে ছলনাময়ী নারী শিলা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে দাবি করে শাহাদাত আরে বলেন,আমার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর আগে শিলা পুলিশের জনৈক এক এসআইয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ায়। সেই পুলিশ কর্মকর্তার সরলতার সুযোগ নিয়ে নিজের বৈবাহিক জীবনের অতীত ও কণ্যাসন্তান থাকার বিষয়টি গোপন করে বিয়ের প্রলোভন দেখান। সেই পুলিশ কর্মকর্তাও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আকরাইনে নিজের নামে তিন শতাংশ ও শিলার নামে তিন শতাংশসহ ছয় শতাংশ জমি কেনেন। যার মূল্যবাবদ পুরো টাকাই তিনি পরিশোধ করেছিলেন। কিন্ত নিজের নামে জমি রেজিষ্ট্রেশনের পরই শিলার আসল চেহারা উন্মোচিত হয়। আত্মসম্মানের ভয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিজের নামের তিন শতসংশ জমি বিক্রি করে একরকম ‘ছেড়ে দে মা কেন্দে বাঁচি’ বলে পালিয়ে আসার মতো তার কবল থেকে রেহাই পান। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিদিন নতুন নতুন টার্গেটকৃত পুরুষদের সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো,দেহব্যবসা ও প্রতারণাই শিলার বর্তমান পেশা।

তবে অভিযুক্ত শিলার মুঠোফোনে ফোন করে এবিষয়ের সত্যতা জানতে চাইলে প্রথমে শাহাদাতের নিকট থেকে কোনো টাকা নেননি বলে তার অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেন। তবে শাহাদাতের বিকাশ এজেন্ট নাম্বার থেকে শিলার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরের বিকাশ পারসোনাল একাউন্টে বিভিন্ন সময়ে লেনদেনের প্রমাণ উপস্থাপন করলে এবার তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সত্যি বলতে, শাহাদাতের সাথে কিছুদিন আমার খুব ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো এবং সম্পর্ক থাকাকালীন বিভিন্ন সময়ে শাহাদাত আমার মোবাইলের বিকাশ নাম্বারে টাকা এনেছে সত্যি। কিন্ত সে টাকা তো সে নিজেই খরচ করেছে।
এদিকে আকরাইনের জমি কিভাবে কিনলেন সে সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে শিলা প্রথমে বলেন,আমার ছয় শতাংশ জমির মধ্যে আমি তিন শতাংশ বিক্রি করে দিয়েছি। অপরদিকে ওই জমি তিনি নিজে কেনেননি বরং প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে শিলা বলেন,হ্যা যিনি এই জমি কিনে দিয়েছিলেন তিনি আমার ভাই। কিন্ত তিনি কেমন ভাই এমন প্রশ্নের কোনে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন পুরুষদের সাথে প্রতারণার অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন,সেটি আমার একান্তই ব্যাক্তিগত বিষয়। কোনো সাংবাদিককে এবিষয়ে কৈফিয়ত দিতে তিনি রাজি নন।

এবিষয়ে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা বিরুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস.আই দিদার হোসেন বলেন,এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধ প্রমাণিত হলে সে যে-ই হোক; তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগস :

প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, থানায় লিখিত অভিযোগ

আপডেট সময় : ০৯:০৮:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০২৩

শিলা আক্তার (৪০)। রহস্যময়ী এই নারী ইতোপূর্বে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন একাধিকবার। ১৩ ও ৬ বছর বয়সী দুটি কণ্যা সন্তানও রয়েছে তার। অন্যদিকে পূর্বের স্বামী-সন্তানের পরিচয় গোপন করে নিজেকে কুমারী পরিচয়ে বিকাশ ব্যবসায়ী যুবকের সঙ্গে গভীর প্রেমে আবদ্ধ। এরপর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় দশ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে উল্টো শাহাদাত নামে ওই যুবককে মিথ্যা ধর্ষণের মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানোর ভয় দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এঘটনায় আত্মসাতকৃত অর্থ উদ্ধারসহ উপযুক্ত বিচারের দাবি তুলে শিলা (৪০) নামে ওই প্রতারক নারীর বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন শাহাদাৎ নামে ভুক্তভোগী ওই যুবক।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী শাহাদাত জানান জানান,সম্প্রতি সাভার মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জানতে পেরে শাহাদাতের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২০ জুন (মঙ্গলবার) নারায়নগঞ্জের চাষাড়া এলাকাকার স্থানীয় কিছু চিহ্নিত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে শাহাদাতের নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ার বাসায় হাজির হন শিলা। শিলার উপস্থিতিতেই স্থানীয় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা পুলিশি অভিযোগ তুলে নিতে শাহাদাতকে হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করেন। অন্যথায় সন্ত্রাসীর তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিলে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম আতংকে রয়েছেন বলেও জানান শাহাদাত।

এদিকে,সাভার মডেল থানার লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী যুবক শাহাদাত হোসেনের বর্ণনা সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের আগষ্ট মাসে সাভার উপজেলাধীন বিরুলিয়া ইউনিয়নের আকরাইন গ্রামের শিলা নামের (৪০) সেই নারীর সাথে রং নাম্বারে পরিচয় ঘটে শাহাদাতের। তিনি নারায়নগঞ্জের চাষাড়া এলাকার বিকাশ ব্যবসায়ী।

মুঠোফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে শিলার পূর্বনির্ধারিত স্থান হিসেবে বিরুলিয়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় প্রথম সাক্ষাৎলাভের পর তাদের সম্পর্কের মাত্রা মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায় ছাপিয়ে ঐকান্তিক এক গতিপথ সৃষ্টির সাথে সাথে শুরু হয় দুটি হৃদয়ের ভাব-বিনিময়! চুড়ান্ত পর্যায়ে দুটি হৃদয়ের ঐকান্তিক সম্মতির পরিনামে প্রেমের সম্পর্কে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়ার এক পর্যায়ে একে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে বদ্ধপরিকর দুটি মন! এরই মধ্যে শিলা শাহাদাতকে নিয়ে উত্তরখান এলাকায় বিপুল নামে এক ব্যাক্তির বাসায় নিয়ে যান। মামাতো ভাই ও অভিভাবক পরিচয়ে বিপুলের বাসাতেই বিয়েসাদীর বিষয়ে কথা হয় তাদের। গত মে মাসের ২৫ তারিখ বিয়ের দিন ধার্য করা হয়।
নিজের ক্ষুদ্র বিকাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আশপাশের একটি পরিচিত জুয়েলারির দোকান থেকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ভাবি স্ত্রীর পছন্দই স্বর্ণের দুই জোড়া কানের দূলের সঙ্গে সঙ্গে একটি আংটিও কিনে ফেলেন। স্বতঃস্ফূর্ত মনে ভাবি স্ত্রী শিলার জন্যে গহনা কিনতে এর পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর স্বর্ণের চেইন কিনতে এক লক্ষ টাকা দেন তিনি।

শহাদাত আরো জানান,পরদিনই শিলার (২৭) চোখে সমস্যার কথা উল্লেখ করে তার মুঠোফোনে ফোন করে কান্নাকাটি জুড়ে দেন। আগামীকালই তার চোখ অপারেশন করাতে হবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তার। অন্যথায় সে আর কোনোদিনই চোখে দেখতে পাবে না।
সেদিনও তাকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আরো পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠান তিনি।

এরপর থেকে প্রায় প্রতিনিয়তই নানা সমস্যা যেনো পিছু ছাড়েনা শিলার। তার আকরাইনের ছয় শতাংশ জমির তিন শতাংশ জমি বিক্রির চেষ্টা চলছে। জমি বিক্রি হওয়ার সাথে সাথেই শাহাদাতকে তার সমস্ত টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিয়ম করে ধার হিসেবে বিভিন্ন অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয় শিলা।

তার সুচারু অভিনয়, ছলচাতুরী ও প্রেমের মোহে অন্ধ হয়ে আগে-পিছে কোনো কিছু না ভেবেই দু-একদিন পরপরই শিলার ব্যবহৃত বিকাশ পার্সোনাল একাউন্টসহ বিভিন্নভাবে বিভিন্ন অংকের অর্থ দিতেই থাকেন শাহাদাত।

একপর্যায়ে হঠাৎ ব্যবসায়িক প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে ভাবি স্ত্রী শিলাকে গত মে মাসের মাঝামাঝিতে ফোন করে তার কাছে আপাততঃ পঞ্চাশ হাজার টাকা ফেরত চাইলে কোনো টাকা দিতে পারবে না বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় সে। শিলার আচরণে হঠাৎ এমন রহস্যময় পরিবর্তন লক্ষ্য করে তাৎক্ষণিকভাবে নিজের প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি আন্দাজ করেন শাহাদাত। আরো একবার ফোন করে তার সমস্যা জানিয়ে ফের পঞ্চাশ হাজার টাকা ফেরত চাইলে, ‘কিসের টাকা,সে কোনো টাকাই নেয়নি’ বলে শিলার কর্কশ জবাবে বুক কেঁপে ওঠে শাহাদাতের!
মাথায় হাত দিয়ে হিসেব মিলিয়ে শাহাদাত অগত্যা বুঝতে পারেন, বিগত দীর্ঘ আট মাস যাবত নিয়মিত ভাবি স্ত্রী শিলা জমি বিক্রি করে ফেরত দিবে জানিয়ে বিভিন্ন অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতে নিতে তার ছোট্ট বিকাশ এজেন্ট ব্যবসায় পুঁজি হিসেবে খাটানো প্রায় লাখ দশেক টাকার পুরোটাই যে কব্জা করে নিয়েছে!

উপায়ন্তর না পেয়ে শাহাদাত শিলার মামাতো ভাই উত্তরখান এলাকার বিপুলের সাথে যোগাযোগ করলে বিপুলও জানায়,শিলা তার কোনো মামাতে বোন নয়;ব্যবসায়িক সূত্রে পরিচিত মাত্র।

সর্বশেষ বিয়ের ধার্য তারিখের এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ গত ১৮ মে সরাসরি শিলার আকরাইনের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন শাহাদাত। কিন্ত শিলা তার সাথে অশালীন ব্যবহার করে তাকে তার বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে; অন্যথায় লোকজন ডেকে তাকে মারধরের ভয়ভীতিও প্রদর্শন করে।

ভুক্তভোগী শাহাদাত জানান,কারণ হিসেবে নেপথ্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে আশপাশের লোকজনদের জিজ্ঞেস করতেই বহুরুপী নারী শিলার আসল পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হন শাহাদাত। আসলে দীর্ঘ আট মাস যার ছলনায় মত্ত হয়ে গভীর প্রেমে মগ্ন ছিলেন, ভাবি স্ত্রী হিসেবে শীঘ্রই বিয়ের পীড়িতে বসবেন বলে নিজের সর্বস্ব উজার করে দিয়েছেন; শিলা নামের সেই নারী বিবাহিত। দশ-বারো বছরের একটি কণ্যাসন্তানও রয়েছে তার। ভাবতেই শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু হিম হয়ে আসে তার।

আরো খোঁজখবর নিয়ে শাহাদাত জানতে পারেন,আয়ের উৎস হিসেবে দৃশ্যমান কোনো পেশা না থাকলেও লোকদেখানো সূদ ব্যবসার অন্তরালে প্রধানত দেহব্যবসার সাথে সাথে টার্গেটকৃত সুদর্শন ও বিত্তশালী পুরুষদের সাথে কথিত প্রেমের সম্পর্ক গড়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণাই বহুরুপী এই নারীর মূল পেশা। তার প্রতারণার জালে জড়িয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন ডজন খানেক পুরুষ। এমনকি তার ছলনা ও প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পাননি খোদ পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা।

শাহাদাত জানান,মিরপুরের রুপনগর আবাসিক এলাকায় বসবাসকালীন সময়ে হেলাল নামে এক গার্মেন্টস কর্মীর সাথে বিয়ে হয় শিলার। তার নিয়ন্ত্রণহীন স্বেচ্ছাচারী উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে বেশি দিন সে সংসার টেকেনি। এরপর মাসুদ নামে এক ব্যাক্তির সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিয়ে করে সে। বহুগামী নারী শিলার অসামাজিক কার্যকলাপে বিরক্ত ও অতিষ্ঠ হয়ে সামাজিক সম্মানের ভয়ে দ্বিতীয় স্বামী মাসুদও তাকে ফেলে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। বর্তমানে শিলা একজন পেশাদার দেহব্যবসায়ী-ভয়ংকর এক প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য।
আকরাইনের জমি-বাড়িটিও তার নিজের টাকায় কেনা নয়। সেটিও পুলিশের এক কর্মকর্তাকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে সুকৌশলে ছলনাময়ী নারী শিলা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে দাবি করে শাহাদাত আরে বলেন,আমার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর আগে শিলা পুলিশের জনৈক এক এসআইয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ায়। সেই পুলিশ কর্মকর্তার সরলতার সুযোগ নিয়ে নিজের বৈবাহিক জীবনের অতীত ও কণ্যাসন্তান থাকার বিষয়টি গোপন করে বিয়ের প্রলোভন দেখান। সেই পুলিশ কর্মকর্তাও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আকরাইনে নিজের নামে তিন শতাংশ ও শিলার নামে তিন শতাংশসহ ছয় শতাংশ জমি কেনেন। যার মূল্যবাবদ পুরো টাকাই তিনি পরিশোধ করেছিলেন। কিন্ত নিজের নামে জমি রেজিষ্ট্রেশনের পরই শিলার আসল চেহারা উন্মোচিত হয়। আত্মসম্মানের ভয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিজের নামের তিন শতসংশ জমি বিক্রি করে একরকম ‘ছেড়ে দে মা কেন্দে বাঁচি’ বলে পালিয়ে আসার মতো তার কবল থেকে রেহাই পান। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিদিন নতুন নতুন টার্গেটকৃত পুরুষদের সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো,দেহব্যবসা ও প্রতারণাই শিলার বর্তমান পেশা।

তবে অভিযুক্ত শিলার মুঠোফোনে ফোন করে এবিষয়ের সত্যতা জানতে চাইলে প্রথমে শাহাদাতের নিকট থেকে কোনো টাকা নেননি বলে তার অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেন। তবে শাহাদাতের বিকাশ এজেন্ট নাম্বার থেকে শিলার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরের বিকাশ পারসোনাল একাউন্টে বিভিন্ন সময়ে লেনদেনের প্রমাণ উপস্থাপন করলে এবার তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সত্যি বলতে, শাহাদাতের সাথে কিছুদিন আমার খুব ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো এবং সম্পর্ক থাকাকালীন বিভিন্ন সময়ে শাহাদাত আমার মোবাইলের বিকাশ নাম্বারে টাকা এনেছে সত্যি। কিন্ত সে টাকা তো সে নিজেই খরচ করেছে।
এদিকে আকরাইনের জমি কিভাবে কিনলেন সে সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে শিলা প্রথমে বলেন,আমার ছয় শতাংশ জমির মধ্যে আমি তিন শতাংশ বিক্রি করে দিয়েছি। অপরদিকে ওই জমি তিনি নিজে কেনেননি বরং প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে শিলা বলেন,হ্যা যিনি এই জমি কিনে দিয়েছিলেন তিনি আমার ভাই। কিন্ত তিনি কেমন ভাই এমন প্রশ্নের কোনে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন পুরুষদের সাথে প্রতারণার অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন,সেটি আমার একান্তই ব্যাক্তিগত বিষয়। কোনো সাংবাদিককে এবিষয়ে কৈফিয়ত দিতে তিনি রাজি নন।

এবিষয়ে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা বিরুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস.আই দিদার হোসেন বলেন,এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধ প্রমাণিত হলে সে যে-ই হোক; তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।