গোয়ালন্দের দৌলতদিয়ার যৌনপল্লীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা
- আপডেট সময় : ০৫:২৯:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ৪৮ বার পঠিত
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ফারুক সরদার (২৮) নামে এক ছাত্রদল কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
শনিবার (১২ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে মাদক, জুয়া ও চাঁদাবাজি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।
নিহত ফারুক দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সোহরাব মণ্ডলপাড়ার পল্লী চিকিৎসক শহিদ সরদারের ছেলে। তিনি দৌলতদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের কর্মী ছিলেন বলে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে।
হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ফারুকের বন্ধু আলামিন (২১) নামে আরেক যুবক। সে দৌলতদিয়া শামসু মাষ্টার পাড়ার আব্দুস সালামের ছেলে।
খবর পেয়ে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) শরীফ আল রাজীব, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি রাকিবুল ইসলাম সহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেন।
নিহত ফারুকের ভাই মনিরুজ্জামান হত্যার বিষয়ে জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজা শুরুর দিন থেকে দৌলতদিয়া রেলস্টেশনের পাশে মেলা বসেছে। ওই মেলায় জুয়ার আসর বসায় স্থানীয় রিপন ও তার সহযোগীরা। মেলার বিভিন্ন দোকান থেকে প্রতিদিন চাঁদাও তুলছিল তারা। তাদের জুয়ার আসর বসানোর ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করে আসছিল ফারুক। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে রিপনের মুদি দোকানে গিয়ে আবারও রিপনকে চাঁদাবাজি ও জুয়ার আসর বন্ধ করতে বলে ফারুক। এ সময় রিপন ও তার সহযোগীরা পাশে থাকা ডাব কাটার ধারালো দা দিয়ে ফারুকের মাথা, পিঠ, দুই পা ও বাম হাতে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেন।
দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। কিন্তু অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রাত ১১ টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফারুককে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং মেলার চাঁদা ও জুয়ার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ফারুক ও রিপনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এ দ্বন্দ্বের জেরে দুদিন আগে দু’গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়। শনিবার রাতে ফারুক ৪/৫ জন বন্ধু মিলে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর ১ নং গেটে অবস্থান করছিল। এ সময় রিপন (৩০), হুমায়ুন (২৫)সহ ১৫/২০ জন সশস্ত্র অবস্থায় সেখানে উপস্হিত হয়ে ফারুকের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তারা ফারুককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়। হামলাকারীদের ঠেকাতে গিয়ে কয়েকজন আহত হন। সে দৌলতদিয়ার আইনদ্দিন বেপারি পাড়ার রমজান ফকিরের ছেলে। রিপন ছাত্রলীগের কর্মী বলে জানা গেছে।
দৌলতদিয়া বাজার পরিষদের সভাপতি ও দৌলতদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোঃ মোহন মন্ডল দাবি করেন, দূর্গাপূজা উপলক্ষে দৌলতদিয়া বাজারের পাশে রেলস্টেশন এলাকায় অল্প কিছু দোকানপাট বসেছে। তবে এবার দোকান মালিকদের সম্পূর্ণ ফ্রি করে দেয়া হয়েছে। কাউকে কোন চাঁদা দিতে হচ্ছে না। পূর্বের ব্যাক্তিগত শত্রুতা হতে হামলা ও নিহতের ঘটনা ঘটেছে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মুহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান, রিপন ও ফারুক গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। তিনদিন আগে দৌলতদিয়া শহীদ মিনার এলাকায় রিপন ও ফারুকের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। শনিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ফারুক কয়েকজন যুবককে নিয়ে যৌনপল্লীতে রিপনের দোকানে গিয়ে তার উপর হামলা চালায়। এ সময় আত্ম রক্ষার্থে রিপন পাশে থাকা ডাব কাটার ধারালো দা দিয়ে ফারুকের উপর চড়াও হয়। এ সময় ফারুকের সঙ্গে থাকা যুবকরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। অভিযুক্ত রিপনসহ অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ হতে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।