ঢাকা ০৭:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
লক্ষ্মীপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট সংস্কার সাতক্ষীরা উপকূলে বিশ্ব জলবায়ু ধর্মঘট কর্মসূচী পালিত বালিয়াকান্দিতে এ্যাসেডের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচী পালিত ভোলা প্রেসক্লাবে গনমাধ্যম কর্মীদের সাথে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মত বিনিময়  আত্রাইয়ে মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ নাগেশ্বরী উপজেলা বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের কমিটি গঠন পত্রিকার প্রকাশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠের প্রকাশকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান পাইকগাছায় দু’পক্ষের বিরোধ ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের ৩জন গুরুতর জখম রাজবাড়ীতে শিক্ষকদের লাঞ্চিতের প্রতিবাদে মানববন্ধন

কেশবপুরে ডোবা থেকে দুই জমজ সন্তানের লাশ উদ্ধার আটক ১

আজিজুর রহমান-কেশবপুর(যশোর):
  • আপডেট সময় : ০৯:৪০:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ নভেম্বর ২০২৩ ১৪৬ বার পঠিত

কেশবপুরে স্বামীর পরকীয়া ও পারিবারিক কলহের জের ধরে সুলতানা ইয়াসমিন (২৭) নামের এক পাষন্ড মা ১৩ দিনের জমজ ছেলে-মেয়েকে বাড়ির পাশের ডোবায় ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পৌর শহরের সাহাপাড়া সংলগ্ন এলাকায়।খবর পেয়ে থানা পুলিশ বুধবার সকালে ডোবা থেকে জমজ ২ শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করাসহ ঘাতক মাকে আটক করেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের গত ২৪ এপ্রিল কেশবপুর পৌর শহরের সাহাপাড়া সংলগ্ন এলাকার আব্দুল লতিফ হাওলাদারের মেয়ে সুলতানা ইয়াসমিনের সাথে আবু বক্কর সিদ্দিকের বিবাহ হয়। দুইজনের বিয়ের পূর্বেই তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বিবাহ ছিলো। সুলতানা ইয়াসমিনের প্রথম স্বামীর অহনা ইয়াসমিন (১১) নামের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর সুলতানা বুঝতে পারে তার স্বামী আবু বক্কার অন্য নারীতে আসক্ত। সেজন্য স্বামীকে সুপথে ফেরাতে বাচ্চা নেওয়ার চিন্তা করে সুলতানা। যার কিছুদিন পর সুলতানা গর্ভে সন্তান আসে। সুলতানার গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থায় স্বামী আবু বক্কার আরো বেপরোয়া জীবন-যাপন শুরু করে। তবুও সুলতানা তার গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ট হলে স্বামীর স্বভাব চরিত্র পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করে ইয়াসমিন। দীর্ঘদিন গর্ভ ধারণের পর গত১০ নভেম্বর রাতে কেশবপুর পৌর শহরের মাতৃমঙ্গল ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সুলতানার জমজ ছেলে ও মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। জন্মের পর থেকে জমজ শিশুদের শারীরিক জটিতলা দেখা দিলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান। সেখানে চার দিন চিকিৎসার পর বাচ্চাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। পুত্র সন্তানটির জন্মের পর হতে ফুসফুস, রক্তসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিলে কেশবপুর হোসেন প্যাথোলজিতে ডাক্তার কামরুজ্জামানের অধিনে চিকিৎসা করায়। কিন্তু সুস্থ্য না হওয়ায় গত ২১ নভেম্বর পুত্র সন্তানটিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয় পুনরায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ২১ নভেম্বর দিবাগত রাতে পুত্র সন্তানটি নিস্তেজ হয়ে যায়। ওইসময় সুলতানা মৃতপ্রায় (নিস্তেজ) পুত্র সন্তানটিকে বাড়ির পাশের ডোবায় নিক্ষেপ করে। এরপর ঘরে ফিরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং কন্যা সন্তানটিকেও সকলের অগোচরে একই ডোবায় জীবন্ত নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে সুলতানা ঘরে ফিরে বাচ্চাদের পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে মিথ্যা কাহিনীর সৃজন করে। পরিবারের সকল সদস্যরা বাচ্চা দুটিকে খোজাখুজি করতে থাকে। ওই সময় সুলতানার পিতা আব্দুল লতিফ বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে না বলে ফোন করে থানা পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে খোজাখুজির একপর্যায়ে বাড়ির পাশে ডোবা থেকে প্রথমে পুত্র সন্তানটির মৃতদেহ উদ্ধার পূর্বক সুরতহাল প্রস্তুত করেন এবং অপর নিখোঁজ কন্যা বাচ্চাটিকে খুঁজতে থাকেন। পরবর্তীতে কন্যা সন্তানটির মৃত অবস্থায় একই ডোবা হতে উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিকভাবে সুলতানা ইয়াসমিনসহ তার পরিবারের সকল সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে সুলতানা তার পুত্র সন্তানসহ জীবিত কন্যা সন্তানটিকে সকলের অগচরে ডোবায় নিক্ষেপের কথা স্বীকার করেন। তবে বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে প্রতিয়মান হয় যে, সুলতানা ইয়াসমিন স্বামীর সাথে পারিবারিক কলহের জেরে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে নিজ সন্তানদের ডোবায় নিক্ষেপ করে হত্যা করেছে।
যশোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ্যান্ড অপারেশন) বেলাল হোসাইন বুধবার ২২ নভেম্বর দুপুরে কেশবপুর থানায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ট্যাগস :

কেশবপুরে ডোবা থেকে দুই জমজ সন্তানের লাশ উদ্ধার আটক ১

আপডেট সময় : ০৯:৪০:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ নভেম্বর ২০২৩

কেশবপুরে স্বামীর পরকীয়া ও পারিবারিক কলহের জের ধরে সুলতানা ইয়াসমিন (২৭) নামের এক পাষন্ড মা ১৩ দিনের জমজ ছেলে-মেয়েকে বাড়ির পাশের ডোবায় ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পৌর শহরের সাহাপাড়া সংলগ্ন এলাকায়।খবর পেয়ে থানা পুলিশ বুধবার সকালে ডোবা থেকে জমজ ২ শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করাসহ ঘাতক মাকে আটক করেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের গত ২৪ এপ্রিল কেশবপুর পৌর শহরের সাহাপাড়া সংলগ্ন এলাকার আব্দুল লতিফ হাওলাদারের মেয়ে সুলতানা ইয়াসমিনের সাথে আবু বক্কর সিদ্দিকের বিবাহ হয়। দুইজনের বিয়ের পূর্বেই তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বিবাহ ছিলো। সুলতানা ইয়াসমিনের প্রথম স্বামীর অহনা ইয়াসমিন (১১) নামের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর সুলতানা বুঝতে পারে তার স্বামী আবু বক্কার অন্য নারীতে আসক্ত। সেজন্য স্বামীকে সুপথে ফেরাতে বাচ্চা নেওয়ার চিন্তা করে সুলতানা। যার কিছুদিন পর সুলতানা গর্ভে সন্তান আসে। সুলতানার গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থায় স্বামী আবু বক্কার আরো বেপরোয়া জীবন-যাপন শুরু করে। তবুও সুলতানা তার গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ট হলে স্বামীর স্বভাব চরিত্র পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করে ইয়াসমিন। দীর্ঘদিন গর্ভ ধারণের পর গত১০ নভেম্বর রাতে কেশবপুর পৌর শহরের মাতৃমঙ্গল ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সুলতানার জমজ ছেলে ও মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। জন্মের পর থেকে জমজ শিশুদের শারীরিক জটিতলা দেখা দিলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান। সেখানে চার দিন চিকিৎসার পর বাচ্চাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। পুত্র সন্তানটির জন্মের পর হতে ফুসফুস, রক্তসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিলে কেশবপুর হোসেন প্যাথোলজিতে ডাক্তার কামরুজ্জামানের অধিনে চিকিৎসা করায়। কিন্তু সুস্থ্য না হওয়ায় গত ২১ নভেম্বর পুত্র সন্তানটিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয় পুনরায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ২১ নভেম্বর দিবাগত রাতে পুত্র সন্তানটি নিস্তেজ হয়ে যায়। ওইসময় সুলতানা মৃতপ্রায় (নিস্তেজ) পুত্র সন্তানটিকে বাড়ির পাশের ডোবায় নিক্ষেপ করে। এরপর ঘরে ফিরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং কন্যা সন্তানটিকেও সকলের অগোচরে একই ডোবায় জীবন্ত নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে সুলতানা ঘরে ফিরে বাচ্চাদের পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে মিথ্যা কাহিনীর সৃজন করে। পরিবারের সকল সদস্যরা বাচ্চা দুটিকে খোজাখুজি করতে থাকে। ওই সময় সুলতানার পিতা আব্দুল লতিফ বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে না বলে ফোন করে থানা পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে খোজাখুজির একপর্যায়ে বাড়ির পাশে ডোবা থেকে প্রথমে পুত্র সন্তানটির মৃতদেহ উদ্ধার পূর্বক সুরতহাল প্রস্তুত করেন এবং অপর নিখোঁজ কন্যা বাচ্চাটিকে খুঁজতে থাকেন। পরবর্তীতে কন্যা সন্তানটির মৃত অবস্থায় একই ডোবা হতে উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিকভাবে সুলতানা ইয়াসমিনসহ তার পরিবারের সকল সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে সুলতানা তার পুত্র সন্তানসহ জীবিত কন্যা সন্তানটিকে সকলের অগচরে ডোবায় নিক্ষেপের কথা স্বীকার করেন। তবে বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে প্রতিয়মান হয় যে, সুলতানা ইয়াসমিন স্বামীর সাথে পারিবারিক কলহের জেরে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে নিজ সন্তানদের ডোবায় নিক্ষেপ করে হত্যা করেছে।
যশোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ্যান্ড অপারেশন) বেলাল হোসাইন বুধবার ২২ নভেম্বর দুপুরে কেশবপুর থানায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।