সালথায় ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুর খনন, বেপরোয়া অসাধু মাটিখেকোরা
- আপডেট সময় : ১০:২৬:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৩ ৬৭ বার পঠিত
সালথা(ফরিদপুর)প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মানুষের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে কৃষি। এই এলাকার মানুষ একমাত্র কৃষির উপর নির্ভরশীল। সারাদেশের মধ্যে পাট-পিয়াজের জন্য বিখ্যাত এ অঞ্চলটি। কৃষিপ্রধান পেঁয়াজ, সোনালী আশ পাট ওআমন ধানের জমির প্রচুর উৎপাদন শক্তি সম্পন্ন ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুরখননের হিড়িক পড়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মাটিখেকোরা এর কোনো তোয়াক্কাই করছেন না।
আর এসব মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায় ও রেললাইনে। আবার অনেকে বাড়ির ভিটা তৈরির জন্য মাটি কিনে নিচ্ছেন। এতে দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বিলীন হতে শুরু করেছে কৃষিজমি। সালথা উপজেলা প্রশাসনের নিরবতার কারণে ভূমি আইন অমান্য করে অবাধে অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করেই চলছে অসাধু মাটিখেকো ব্যবসায়ীরা। যেন দেখার কেউ নেই।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার একটি প্রতারক চক্রের মাধ্যমে উপজেলা ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অর্থের বিনিময় ম্যানেজ করে তিন ফসলি জমি ধ্বংস করে মাটি বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে মাটিখেকোরা। মাটি খেকোদের উৎপীড়নে দিশাহারা উঠেছে ফসলি জমির মালিক ও কৃষি শ্রমিকরা। তবে মাটি খেকোদের পরামর্শে কোনো কোনো জমির মালিক জমিতে ফসল ফলানোর চেয়ে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করে বেশি লাভের আশায় পুকুর খনন করছেন।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেল বেলা সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের খালিশপট্টি গ্রামে মদন হাজীর বাড়ির সামনে মাঠের ভিতর ফসলি জমির উর্বর মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে কেটে অবৈধ ট্রলি গাড়ি ও ট্রাকে করে পাঠানো হচ্ছে ইটভাটায়। প্রায় দুই বিঘা আবাদি জমি থেকে একটি ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে আর ৩-৪টি অবৈধ ট্রলি গাড়িতে করে তোলা মাটি নেওয়া হচ্ছে। ওই জমির চারপাশে হালি পেঁয়াজের চারাগুলো বেড়ে উঠতে শুরু করেছে।
ভেকু ও ট্রলির ড্রাইভাররা জানান, জমির মালিক খালিশপট্টি গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে শাখাওয়াত হোসেন। তিনি এসব মাটি বিক্রি করেছেন ইটভাটায় ও
গৃস্থদের কাছে। আমরা শুধু মাটি কেটে গন্তব্যে পৌছে দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাটির তোলার কাজে নিয়জিত একজন ট্রলির ড্রাইভার বলেন, মাটি কাটা শুরুর প্রথম দিন ২টি মোটর সাইকেল যোগে ৪-৫ জন লোক এসে জমির মালিকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। এই টাকা দিয়ে তারা নাকি ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করবে বলে জানায়। এরপর থেকে গত ৬-৭দিন ধরে আমরা নিরাপদে মাটি কাটছি। কেউ আমাদের বাধা দিচ্ছে না।
এ বিষয় জমির মালিক শাখাওয়াত হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে শাখাওয়াতের ভাই হাসমত আলী বলেন, শাওখাওয়াত হোসেন খুবই অসুস্থ। তাকে উন্নত চিকিৎসা করার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করে টাকার জোগার করছি।
নিরাপদে মাটির কাটার জন্য কাউকে কোনো টাকা-পয়সা দেওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাউকে টাকা দেওয়ার ব্যাপারে আমার জানা নেই। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একবার মাটি কাটতে বাধা দিয়েছিল, মাটি কাটা ও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ৬-৭ দিন ধরে আবার মাটি কাটা চালু করা হয়েছে, এখন আর কেউ মাটি কাটাতে বাধা দিচ্ছে না।
অপরদিকে উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের পিসনাইল বোড অফিসের পাশে ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করতে দেয়া দেখা নাসির উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে।
একই ইউনিয়নের কাজীর বল্লভদী মাঠে ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করছেন ইদু শেখ নামে আরেক ব্যক্তি। ইদু শেখ ও নাসির উদ্দীন বলেন, আমাদের জমির মাটি আমরা বিক্রি করতেই পারি। পুকুর খনন করে মাছ ছাড়বো। ফসলের চেয়ে মাছ চাষে লাভ বেশি। তাই পুকুর বানাচ্ছি। আমরা এসব মাটি রেললাইন নির্মাণকারীদের কাছে বিক্রি করছি। ফসলি
জমি থেকে মাটি কাটছি অনেকদিন ধরে কেউ তো আমাদের বাধা দিচ্ছে না।
এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় তিন ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর দাবি, মাছ চাষের কথা বলে পুকুর খনন করে বিঘার পর বিঘা আবাদি কৃষিজমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে ইটভাটা ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাছে বিক্রি করছে মাটি বিক্রেতারা। এসব মাটি অবৈধ টলিতে করে নেওয়া-আনার ফলে অধিকাংশ গ্রামীণ কাচাপাঁকা সড়কের বেহাল অবস্থা
সৃষ্টি হয়েছে।
সালথার সোনাপুর-মাঝারদিয়া সড়কের অটোচালক হাবিবুর রহমান ও ভ্যানচালক ইশারত হোসেন বলেন, সড়ক যতই মেরামত করুন, তাতে লাভ নেই। অবৈধ ট্রলি দিয়ে মাটি নেওয়া-আনা বন্ধ করা না হলে সড়কের বেহাল অবস্থা ভাল হবে না। তবে মাটিখেকোর
ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সালাউদ্দীন আইয়ুবী বলেন, কোনোভাবেই ফসলি জমি থেকে মাটি পুকুর খনন করা যাবে না। আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে মাটিখেকোদের বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও জরিমানা করছি। আর ভুমি অফিসের কেউ যদি সুবিধা নিয়ে মাটির কাটার সুযোগ করে দেয়, তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এ ব্যাপারে কাউকেই ছাড় দেবো না।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, যেখানেই ফসলি জমি থেকে মাটি বিক্রি করা হবে, সেখানেই অভিযান চালানো হবে। উপজেলার সকল জায়গায় খোজ-খবর নিয়ে মাটি কাটা বন্ধের ব্যবস্থা করা হবে।