দেশপ্রেমিকের কথা বলে যাই শুনুন…….
- আপডেট সময় : ০৬:৩৮:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ মে ২০২৩ ১২৭ বার পঠিত
আমরা আপাতঃ দৃষ্টিতে অনেক সময় অনেককে অতি সাধারন মানুষ বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য বা অবহেলা করে থাকি। কিন্তু তা মোটেই ঠিক নয়। তুচ্ছ ভাবাপন্ন মানুষটি অনেক ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ন হতে পারেন।
অদ্য ১৯ মে,২০২৩ শুক্রবার বিকেলে সরকারী গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজ মাঠের এক কোনায় পাকা সিঁড়িতে বসে ছেলেদের ফুটবল খেলা দেখছিলাম। সিড়ির অপর পাশে বসে ছিলেন অনেক বয়স্ক একজন মানুষ। অপরিচিত দেখে অনেকক্ষন কথা বলছিলাম না। পরে নিরবতা ভেঙ্গে আমিই কথা শুরু করলাম। জানলাম এখানে মেয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছেন তিনি। তার মেয়ে জামাই মরহুম আব্দুস সাত্তার। একমাত্র নাতি নিশাদ বিমান বাহিনীতে চাকুরি করে।
তার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ নুরুল ইসলাম। বয়স ৯১ বছর। তিনি রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের ১৯৬৪-‘৯৪ পর্যন্ত টানা ৩০ বছরের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, পাংশা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও ১৯৫৮ সালের বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার চ্যাম্পিয়ন এ্যাথলেট। সেইসাথে তিনি একজন বৃটিশ বিরোধী সংগ্রামী। ১৯৫৪ সাল হতে আওয়ামীলীগের রাজনীতির একজন সক্রিয় কর্মী তিনি। ছিল বঙ্গবন্ধুর সাথে ঘনিষ্ট সখ্যতা। বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে গিয়ে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। শেখ হাসিনাকে নিয়েও বলেন কিছু স্মৃতি কথা।
রাজবাড়ীর সাবেক এমপি হেদায়েত কাজী, পাংশার সাবেক এমপি এবিএম নুরুল ইসলাম, খোন্দকার নুরুল ইসলাম, বর্তমান এমপি জিল্লুল হাকিম, মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল জব্বার, গোয়ালন্দের সন্তান সাবেক এমপি ওয়াজেদ চৌধুরী, উজানচের সাবেক চেয়ারম্যান হানিফ মোল্লা,কাইমদ্দিন প্রামানিক,নিজাম উদ্দিন আহমেদ,ফরিদপুরের মোহন মিয়া,লাল মিয়া সহ বিভিন্ন বিশিষ্ট জনদের সাথে ছিল তার অন্তরঙ্গতা।
তিনি বলেন,বন্দে মাতারম স্লোগান দিয়ে বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে তাদের তাড়িয়েছি। পরবর্তিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলাম।
সংক্ষিপ্ত সময়ের আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “আমরা দেশকে গভীরভাবে ভালবেসে দেশের জন্য যথাসাধ্য কাজ করেছি। কিন্তু আজকাল সেই দেশপ্রেম ও আদর্শের বড়ই অভাব।দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়েছে অনেক।তবে দূর্নীতি ও মূল্যবোধের অবক্ষয় ছড়িয়ে পড়েছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তিনি আরো বলেন,দূর্ণিতী দূর করা গেলে এই দেশটা সত্যিকারের সোনার বাংলা করে গড়ে তুলতে মাত্র দুই বছরের ব্যাপার।”
স্মৃতি রোমন্থন তিনি গোয়ালন্দের হানিফ মোল্লা চেয়ারম্যান ও তার নিজের কথা বলতে গিয়ে বলেন,আমরা মানুষকে ভালবেসে তাদের জন্য কাজ করেছি। অনিয়ম, দূর্ণিতি কি জিনিস তা আমরা বুঝতাম না, করতাম না।আমরা কখনো কোন কাজে থানায় যাইনি। বিশেষ প্রয়োজনে থানার ওসি-দারোগারাই আসতেই আমাদের কাচারি বা অফিসে। মানুষে মানুষে তখন খুব সদ্বাভ ছিল।একে অন্যের বিপদে-আপদে সবাই মিলে ঝাপিয়ে পড়ত। ভালো কাজে কখনো নিজের লাভ-ক্ষতির হিসেব করত না।
শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা পেশায় আছি জেনে খুব খুশি হলেন। আমার জন্য অনেক দোয়া করলেন।সেইসাথে জানালেন অনেক প্রত্যাশার কথা।
দেশপ্রেমী এই বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি আমার আন্তরিক শুভকামনা ও দোয়া রইল।
আসুন,আমরা এই দেশপ্রেমী মানুষটার প্রত্যাশা পূরনে যার যার জায়গা হতে আন্তরিকভাবে কাজ করি।