বিএনপি কর্মীর প্রতিশোধের ৩০টি কোপের অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সালথার সেই যুবক
- আপডেট সময় : ০৭:২৩:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ৩০ বার পঠিত
গত তিন দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের ৩০টি কোপে দুটি হাত ও একটি পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হওয়া ফরিদপুরের সালথা উপজেলার পূর্ব সোনাপুর গ্রামের সেই যুবক আনিচুর রহমান। তার পরিবারের আশঙ্কা আনিচুর বেঁচে থাকলেও তাকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে পারে। সেই সাথে কেটে ফেলা হতে পারে একটি।
তবে কি কারণে কৃষক আনিচুরকে এভাবে কোপানো হলো তা প্রথম দিকে পরিস্কারভাবে জানা যায়নি। যদিও স্থানীয়রা জানিয়েছিলেন জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তার উপর হামলা করা হয়েছে। তবে কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আনিচুরকে কোপানোর আসল রহস্য।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সালথা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সোনাপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাবুর সমর্থক আনিচুর। আর তাকে যারা কুপিয়েছে তারা স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপি নেতা প্রভাষক জয়নাল আবেদিনের সমর্থক। যদিও আতিক আর আনিচুর সম্পর্কে প্রতিবেশী চাচা-ভাতিজা। গত চার বছর আগে ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিএনপি কর্মী আতিক ফকিরকে কু্ঁপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেন আনিচুর ও তার পরিবার। আতিকের পরিবারের দাবি, আতিক বিএনপি কর্মী হওয়ায় তার উপর হামলার ন্যায় বিচার পাননি তারা।
তাই গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর পেয়ে সেই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেন আতিক ও তার লোকজন। এরই ধারাবাহিকতায় চার বছর পর গত বুধবার (১৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ফসলি জমির মাঠে একা পেয়ে চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরে আওয়ামী লীগ কর্মী আনিচুরকে এলোপাথাড়ি কোপায় স্থানীয় বিএনপি কর্মী আতিক ফকির ও তার লোকজন। অন্তত ৩০টি কোপ দেওয়া হয় তাকে। এতে তার দুটি হাত ও একটি পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ফরিদপুর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকালে উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাবু বলেন, আনিচুরের অবস্থা খুবই খারাপ। তিনি হাসাপাতালের বিছিনায় অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তাকে অন্তত ৩০টি কোপ দেয়। তার দুটি হাত ও একটি পা প্রায় বিচ্ছিন্ন। হাত-পায়ের হাড়গুলো কেটে ও ভেঙ্গে যেভাবে চুরমার হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাকে ১৫ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। তার হাত-পায়ের মাংসে পচন ধরেছে কি না, তা পরীক্ষা করছেন চিকিৎসকরা। এমন অবস্থায় আনিচুর বাঁচলে পঙ্গু হয়ে বাঁচতে হবে। এ ছাড়া একটি পাও কেটে ফেলা লাগতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদিন বলেন, চার বছর আগে আতিককে কুপিয়েছিলেন আনিচুর ও তার পরিবার। সেই ঘটনায় মামলা এখনও চলমান রয়েছে। মূলত ন্যায় বিচার না পেয়ে ক্ষোভে প্রতিশোধ নিতে পারে।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, আনিচুরকে কোপানোর ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে থানা একটি মামলা হয়েছে। আনিচুরের ভাই হাফিজুর রহমান দাবী হয়ে ১৭ জনকে আসামি করে এ মামলাটি দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আতিক ফকিরসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।