ঢাকা ০৫:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পত্রিকার প্রকাশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠের প্রকাশকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান পাইকগাছায় দু’পক্ষের বিরোধ ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের ৩জন গুরুতর জখম রাজবাড়ীতে শিক্ষকদের লাঞ্চিতের প্রতিবাদে মানববন্ধন গোয়ালন্দ পাক দরবার শরিফ নিয়ে গুজব ছড়ানো সংবাদের প্রতিবাদ প্রথমবারের মতো সেনাসদর পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংসদ থেকে যত টাকা খোয়া গেছে আশুলিয়ায় ধর্ষকের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে ভুক্তভোগী নারীর সংবাদ সম্মেলন দৌলতদিয়া- পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ৭ জেলে নিখোঁজ 

কুড়িগ্রামে ‘বীর নিবাস’ নির্মাণকাজে অনিয়ম চুক্তিপত্র অনুযায়ী কাজের নির্দেশ

রফিকুল ইসলাম রনজু-কুড়িগ্রাম:
  • আপডেট সময় : ০২:০৫:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ মার্চ ২০২৪ ১৫৮ বার পঠিত

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত‘বীর নিবাস’ নির্মাণকাজের মান নিয়ে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ( দ্বিতীয় পর্যায়ে ) চারটি প্যাকেজে ২০টি বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এরমধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে বীর নিবাস নির্মাণ কাজের বরাদ্দ আসলেও দ্বিতীয় পর্যায়ের (তৃতীয় প্যাকেজ) বাড়ির নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। ফলে নতুন ঘর নির্মাণের জন্য পুরাতন ঘর ভেঙে জায়গা ফাঁকা করে দেওয়া এসব বীর মুক্তিযোদ্ধারা পরিবার আবাসন সংকটে দিন কাটাচ্ছেন।

এছাড়াও ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় বীর নিবাস নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু কাজ শুরুর পর থেকেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিম্নমানের বালু, ইট, মাপে কম ও কাজের মান নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। কাজের মানুন্নয়ন ও অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে উপজেলার পাঁচজন বীর মুক্তিযোদ্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ০২১-২০২২ অর্থ বছরে(দ্বিতীয় পর্যায়ে ) ফুলবাড়ী উপজেলায় চারটি প্যাকেজে ২০টি বাড়ী এবং ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে(তৃতীয় পর্যায়ে) ৬টি প্যাকেজে ৩৬জন অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের থাকার জন্য আবাসন নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি বীর নিবাস নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৪ লাখ ১০ হাজার ৩৮২ টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে পাঁচটি ঘরকে একটি প্যাকেজের আওতায় এনে ২০টি এবং তৃতীয় পর্যায়ে ৬টি ঘরকে একটি করে প্যাকেজের আওতায় এনে ৩৬টি বীর নিবাস নির্মাণের জন্য আলাদা আলাদা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে এই নির্মাণকাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ হয়েছে। মো. হারুন অর-রশিদ নামের এক ঠিকাদারের প্যাকেজের পাঁচটি কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। অন্যদিকে তৃতীয় পর্যায়ের ৩৬টি বাড়ীর মধ্যে ৬জন ঠিকাদারের পাঁচজন ঠিকাদারের কাজ নিয়ে অভিযোগ না থাকলেও ঠিকাদার মো. হারুন অর-রশিদের কাজের নির্মাণ সামগ্রী ও মান নিয়ে অভিযোগ ওঠে। সরেজমিনে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঘুরে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দেওয়া তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের প্রেক্ষিত তদন্ত কমিটি সাইট পরিদর্শন করে। এসময় তাঁরা ইটের ফিল্ড টেস্ট করেন এবং এতে বেশিরভাগ পুরাতন এবং চুক্তিপত্র বহির্ভূত ইট দেখতে পায়। এছাড়াও সিসি ঢালাই এর পূরুত্ব ৩ ইঞ্চির স্থলে ২ ইঞ্চি ও ১ দশমিক ৭৫ ইঞ্চি পায় এবং প্রস্থ ২০ ইঞ্চির স্থলে ১৬ থেকে ১৭ ইঞ্চি পায়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দয়া করে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য ঘরের বাজেট দিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর নির্মাণে অনিয়মের শেষ নেই। ঠিকাদারের লোকজন নিম্নমানের ইট-বালু দিয়ে কাজ করছে। বিল্ডিং ঘর তোলার জন্য সিসি ঢালাইয়েও কারচুপি করে পরিমাণে কম দিচ্ছে। কিছু বললেই কাজ বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখায়। ঠিকাদার হারুন অর রশিদের কাজের মান একেবারে ভালো না। আমি এর প্রতিকার চাই।

তদন্ত কমিটির সদস্য ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের প্রেক্ষিত সরেজমিনে তদন্ত করে নিম্নমানের ইট, বালু এবং সিসি ঢালাই এ কম দেওয়ার সত্যতা পেয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ঠিকাদার হারুন অর রশীদের নিম্নমানের কাজের সরেজমিন প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ঠিকাদার হারুন অর রশিদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার জন্য ফোন দেওয়া হলে তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিব্বির আহমেদ জানান, বীর নিবাস নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির সরেজমিন প্রতিবেদনের আলোকে ঠিকাদারকে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নিয়ে চুক্তিপত্র অনুযায়ী কাজের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ট্যাগস :

কুড়িগ্রামে ‘বীর নিবাস’ নির্মাণকাজে অনিয়ম চুক্তিপত্র অনুযায়ী কাজের নির্দেশ

আপডেট সময় : ০২:০৫:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ মার্চ ২০২৪

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত‘বীর নিবাস’ নির্মাণকাজের মান নিয়ে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ( দ্বিতীয় পর্যায়ে ) চারটি প্যাকেজে ২০টি বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এরমধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে বীর নিবাস নির্মাণ কাজের বরাদ্দ আসলেও দ্বিতীয় পর্যায়ের (তৃতীয় প্যাকেজ) বাড়ির নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। ফলে নতুন ঘর নির্মাণের জন্য পুরাতন ঘর ভেঙে জায়গা ফাঁকা করে দেওয়া এসব বীর মুক্তিযোদ্ধারা পরিবার আবাসন সংকটে দিন কাটাচ্ছেন।

এছাড়াও ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় বীর নিবাস নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু কাজ শুরুর পর থেকেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিম্নমানের বালু, ইট, মাপে কম ও কাজের মান নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। কাজের মানুন্নয়ন ও অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে উপজেলার পাঁচজন বীর মুক্তিযোদ্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ০২১-২০২২ অর্থ বছরে(দ্বিতীয় পর্যায়ে ) ফুলবাড়ী উপজেলায় চারটি প্যাকেজে ২০টি বাড়ী এবং ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে(তৃতীয় পর্যায়ে) ৬টি প্যাকেজে ৩৬জন অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের থাকার জন্য আবাসন নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি বীর নিবাস নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৪ লাখ ১০ হাজার ৩৮২ টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে পাঁচটি ঘরকে একটি প্যাকেজের আওতায় এনে ২০টি এবং তৃতীয় পর্যায়ে ৬টি ঘরকে একটি করে প্যাকেজের আওতায় এনে ৩৬টি বীর নিবাস নির্মাণের জন্য আলাদা আলাদা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে এই নির্মাণকাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ হয়েছে। মো. হারুন অর-রশিদ নামের এক ঠিকাদারের প্যাকেজের পাঁচটি কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। অন্যদিকে তৃতীয় পর্যায়ের ৩৬টি বাড়ীর মধ্যে ৬জন ঠিকাদারের পাঁচজন ঠিকাদারের কাজ নিয়ে অভিযোগ না থাকলেও ঠিকাদার মো. হারুন অর-রশিদের কাজের নির্মাণ সামগ্রী ও মান নিয়ে অভিযোগ ওঠে। সরেজমিনে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঘুরে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দেওয়া তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের প্রেক্ষিত তদন্ত কমিটি সাইট পরিদর্শন করে। এসময় তাঁরা ইটের ফিল্ড টেস্ট করেন এবং এতে বেশিরভাগ পুরাতন এবং চুক্তিপত্র বহির্ভূত ইট দেখতে পায়। এছাড়াও সিসি ঢালাই এর পূরুত্ব ৩ ইঞ্চির স্থলে ২ ইঞ্চি ও ১ দশমিক ৭৫ ইঞ্চি পায় এবং প্রস্থ ২০ ইঞ্চির স্থলে ১৬ থেকে ১৭ ইঞ্চি পায়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দয়া করে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য ঘরের বাজেট দিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর নির্মাণে অনিয়মের শেষ নেই। ঠিকাদারের লোকজন নিম্নমানের ইট-বালু দিয়ে কাজ করছে। বিল্ডিং ঘর তোলার জন্য সিসি ঢালাইয়েও কারচুপি করে পরিমাণে কম দিচ্ছে। কিছু বললেই কাজ বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখায়। ঠিকাদার হারুন অর রশিদের কাজের মান একেবারে ভালো না। আমি এর প্রতিকার চাই।

তদন্ত কমিটির সদস্য ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের প্রেক্ষিত সরেজমিনে তদন্ত করে নিম্নমানের ইট, বালু এবং সিসি ঢালাই এ কম দেওয়ার সত্যতা পেয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ঠিকাদার হারুন অর রশীদের নিম্নমানের কাজের সরেজমিন প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ঠিকাদার হারুন অর রশিদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার জন্য ফোন দেওয়া হলে তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিব্বির আহমেদ জানান, বীর নিবাস নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির সরেজমিন প্রতিবেদনের আলোকে ঠিকাদারকে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নিয়ে চুক্তিপত্র অনুযায়ী কাজের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।