সবুজ পাহাড়ের বুকে সরিষার বাম্পার ফলন; কৃষকের মুখে হাসি
- আপডেট সময় : ০৯:০৬:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৪ ৪০৬ বার পঠিত
অনুকূল আবহাওয়া আর রোগবালাই কম থাকায় মাটিরাঙ্গাতে ভালো হয়েছে সরিষার আবাদ। সরিষার ফলনে মৌ-মৌ সুগন্ধে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজের পাদদেশে হলুদের ছড়াছড়ি। সবুজের বুকে সরিষার খেতে ফুটেছে সরিষার ফুল। পাহাড়ের বুকে বিস্তীর্ণ জমিতে যতদূর চোখ যায় যেন সরিষার হলুদ ফুলের মাখামাখি। যেখানে প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সৌন্দর্য্যের নান্দনিকতায়। স্বল্প সময় আর কম খরচে সরিষাচাষে অর্থনৈতিক সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন পাহাড়ের প্রান্তিক কৃষকরা।
গত বছরের তুলনায় এ বছর সবুজ পাহাড়ে ঘেরা প্রকৃতির রানী খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গাতে বেড়েছে সরিষার আবাদ। আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকরা। সরকারিভাবে বিশেষ প্রর্দশনী প্লট ছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকে।
চলতি মৌসুমে মাটিরাঙ্গার বেলছড়ি, গোমতী, আমতলী, বড়নাল, তবলছড়ি ও তাইন্দং সহ বিভিন্ন এলকায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে মাটিরাঙ্গাতে ২৫৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার তিনগুণ। সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি তেলের দাম বৃদ্ধিতে সারাদেশের মতো খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গাতেও সরিষার আবাদ বেড়েছে।
পড়াশোনার পাশাপাশি সরিষাচাষে আর্থিক সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজ পড়ুয়া ছাত্র গোমতী ইউনিয়নের ০৪ নং ওয়ার্ড চন্দ্র হার পাড়ায় অনুতোষ ত্রিপুরা। ধান ও সবজি চাষের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো ব্যাক্তিগত উদ্যেগে ৩ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সরিষায় এবার ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখছি।
উপজেলার গোমতী ইউনিয়নের বান্দরছড়া এলাকায় মো: সোহাগ মিয়া বলেন, বোরো ও আমনের মাঝামাঝি সময়ে পরিত্যক্ত জমিতে সরিষা চাষে বাড়তি আয় হয় । স্বল্প সময়ে সরিষা চাষে বেশি লাভবান হওয়ার কারণে কৃষকের ভাগ্য বদলে যেতে পারে।
অপর চাষি কৃষক মোশারফ হোসেন আড়াই একর জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন জানিয়ে বলেন, গতবার সল্প পরিসরে সরিষার চাষ করি ফলন ভালো হওয়ায় এবার বেশি জমিতে আবাদ করেছি। এ মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি সরিষা পাওয়া যাবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এবিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: আমির হোসেন বলেন, বিগত সময়ের তুলনায় চলতি মৌসুমে কৃষকদের মাঝে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। বিনা ও বারি জাতের সরিষার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে রাজস্ব প্রদর্শনী প্লট ১০ টি এবং প্রণোদনার আওতায় ৪৫০টি প্লট বরাদ্দ সহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১০০জন সহ মোট ৫৬০ চাষিকে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সহয়তা প্রদান করা হয়েছে । প্রদর্শনী প্লটের বাইরেও প্রান্তিক চাষিরা ব্যক্তি উদ্যোগে সরিষা চাষে ঝুঁকছেন। এর মধ্যে বিলুপ্ত জাতের সরিষাও রয়েছে।
সরিষা মধ্যবর্তী ফসল উল্লেখ করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার মো: সবুজ আলী বলেন, বোরো ও আমনের মাঝামাঝি তিন মাস সময়ে পরিত্যক্ত জমিতে সরিষা চাষ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ বেছে নিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে এবং আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা। সরিষা আবাদ করার জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। সরিষা চাষে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত সরিষার আবাদ হয়েছে। পাহাড়ে সরিষা চাষে কৃষকদের আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি তেলের আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশে কমে আসবে বলেও মনে করেন তিনি।
সরিষা মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে বেশ পরিচিত। আমনের ফসল ঘরে তোলার পর বোরো চাষের জন্য তিন মাস সময় অপেক্ষা করতে হয়। বোরো ও আমনের মাঝামাঝি সময়ে পরিত্যক্ত জমিতে সরিষা চাষ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ বেছে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
সরিষা আড়াই থেকে তিন’মাসের মধ্যেই হয়ে যায়। সরিষা আবাদে তেমন সেচের প্রয়োজন হয় না। কম সময়ে সরিষা চাষে ফলন পাওয়া যায়। সরিষা উৎপাদন করে দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ সম্ভব। সরিষার তেলে রয়েছে অনেক ঔষধী গুণ। পাশাপাশি সরিষার খৈল পশুখাদ্য ও জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধির কাজে ব্যবহার হয়। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া যে জমিতে সরিষার পাতা ঝড়ে পড়ে সে জমির খাদ্য চাহিদা বিশেষ করে ইউরিয়া সার অনেকাংশে কম লাগে।
সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ দেখতে দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই ভীড় জমাতেও দেখা গিয়েছে।