কৃষিতে বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ বরাদ্দে শতভাগ সফলতা-পি,ডি মাহাবুব আলম
- আপডেট সময় : ০৫:৫৬:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৪৮ বার পঠিত
শুষ্ক মৌসুমে কৃষিতে সেচের পানির অভাব আর বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি কারনে ক্ষেতে জলাবদ্ধতা থাকায় কৃষকের আহাজারি। সেই সাথে অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি। এ সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য বর্তমান সরকার নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। ব্রীজ,কালভার্ট আর খাল খননের মধ্য দিয়ে সবমিলিয়ে এখন কৃষকের সোনালী সুদিন ফিরেছে। ফলে বদলে যাচ্ছে কৃষির দৃশ্যপট।
বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি প্রধান কৃষিকে আধুনিকায়ন করতে নানামুখী কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার। তারমধ্যে কৃষি কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেচ কাজের জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যে কুষ্টিয়া,চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর এই তিন জেলায় মুজিব নগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে খাল খনন ও পানি নিষ্কাশনের জন্য কালভার্ট নির্মাণসহ বহুমুখী কাজ চলমান রয়েছে।
১ কেজি ধান উৎপাদনে প্রায় ৩ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। তাই কৃষি কাজের অন্যতম অপরিহার্য উপদান হচ্ছে পানি,পানি ছাড়া কোন কিছুই উৎপাদন করা যায় না,সুতরাং কৃষি প্রধান এই দেশের তিন জেলার কৃষকের জন্য মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প এক আশীর্বাদের নাম।
বর্ষা মৌসুমে কৃষি জমিতে জলবদ্ধতার কারণে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়,এই কারণে বর্ষা মৌসুমে কৃষিজাত নিত্য-পণ্যের দাম হয়ে যায় আকাশ ছোঁয়া,দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পহাতে হয় সাধারণ মানুষের।
এছাড়াও জলাবদ্ধতা ও রাস্তা না থাকায় মাঠ থেকে কৃষি পণ্য পরিবহন ক্ষেত্রেও দেখা যায় নানা ভোগান্তি। এই সকল সমস্যা থেকে স্থায়ী ভাবে উত্তরণের জন্য বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার নানামুখী কর্মসূচীর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের মুজিব নগর সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ৪৩৫ টি ছোট,বড়,মাঝারি কালভার্ট।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুরের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, একটা সময় আমাদের মাঠে একটু বৃষ্টি হলে ও বর্ষা মৌসুমে পানি জমে থাকতো কিন্তু গতবছরে মাঠের দুই প্রান্তে কালভার্ট নির্মাণ হওয়ায় এই সমস্যা থেকে চিরদিনের জন্য আমরা মুক্তি পেয়েছি।
চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর এলাকার কৃষক আব্দুর রহীম জানান,বানাতখালী খাল খনন হওয়াতে আমাদের কৃষকদের জন্য যেন ঈদ আনন্দ বয়ে এনেছে। সরকারের কাছে আর কিছুই চাওয়ার নেই।
মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার নাগাবিল এলাকার কৃষি উদ্যোক্তা নাহিদ হাসান জানান,
বড় নাগার মাঠ থেকে গৌরিনগর গ্রামের ভিতর দিয়ে ভৈরব নদীতে পানি নিস্কাসনের জন্য একটি খাল থাকলেও কালের পরিক্রমায় সেটি ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে ছিলাম আমরা কয়েক গ্রামের মানুষ তবে এবার খাল খননের পরে স্থায়ী সমাধান হয়েছে জলাবদ্ধতার।
এবিষয়ে মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মাহাবুব আলম বলেন, সেই যুগে আলাদিনের যাদুর চেরাগ যেমন তার মালিকের চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করেছিল ঠিক এই যুগে এসে মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প তেমনি কৃষকদের সকল চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করে চলছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কৃষির উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন। যেকারণে আজ সমস্ত বাধা বিঘ্নতা পেরিয়ে দেশ পৌঁছে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তন ও দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে নানামুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছেন আর আমরা মাঠ পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন করছি।
উল্লেখ্য যে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেপুর জেলার ১৩টি উপজেলার সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২৩১ কোটি টাকা খরচে মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প নামের একটি প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়।
‘মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন’ নামের প্রকল্পটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের প্রধান কাজগুলো হলো- ৫১টি খাল ২২০ কিলোমিটার পুনঃখনন করা। বিদ্যুৎ/সৌরশক্তি চালিত লো-লিফ্ট পাম্প (এলএলপি) স্থাপন করা ১৩০টি (৫ কিউসেক ২৫টি, ২ কিউসেক ৫০টি, ১ কিউসেক-৩০টি, ০.৫ কিউসেক ২৫টি)। পুরাতন গভীর নলকূপ মেরামত/সংস্কার-৪৮টি। এলএলপি/গভীর নলকূপের ভূ-গর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণ ১৭৮টি (১ হাজার ৫০০ মিটারের ৭৩টি, ১ হাজার ২০০ মিটারের ৫০টি, ১ হাজার মিটারের ৩০টি, ৮০০ মিটারের ২৫টি)। ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা বর্ধিতকরণ ২২৫টি (প্রতিটি ৬০০ মিটার)। সৌরশক্তি চালিত পাতকূয়া নির্মাণ করা ১৩০টি। ছোট/মাঝারি/বড় আকারের সেচ অবকাঠামো নির্মাণ ৪৩৫টি (ক্রস ড্যাম/ফুট ব্রিজ, ক্যাটল ক্রসিং) (বড় আকারের-১৫ টি, মাঝারি আকারের ১২০টি, ছোট আকারের ৩০০টি)। প্রি-পেইড মিটার ক্রয় ৫০টি, পাম্প টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন একটি এবং অফিস ভবন নির্মাণ দুইটি (প্রতিটি ৪ হাজার বর্গফুট)।