ঢাকা ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
দেবহাটায় মাছের পাশাপাশি ভেঁড়িতে অসময়ে তরমুজ চাষে স্বাবলম্বী গোলাম রব্বানী তথ্যমেলায় মুজিববর্ষের লিফলেট ও শেখ হাসিনার বাণী প্রচার: আগামীকাল খানসামায় আসছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বালিয়াকান্দিতে উপজেলা পর্যায়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন পাইকগাছায় বিপুল পরিমাণ পলিথিন ব্যাগ ও কারেন্ট জাল জব্দ পাইকগাছার গদাইপুরে গনশুনানী অনুষ্ঠিত জনগণের আস্থা পেলে ধানের শীষের জয় সুনিশ্চিত: ডাঃ এ জেড এম জাহিদ টঙ্গি ইজতেমা হামলার প্রতিবাদে হিলিতে সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ৩১দফা অবহিতকরণে আত্রাইয়ে সাহাগোলা ইউনিয়ন বিএনপি’র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত চারঘাটে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি ইসরাইল, সম্পাদক সুজন

হারিয়ে যাচ্ছে শেরপুরের নৃগোষ্ঠীদের নিজস্ব ভাষা

শেখ সাঈদ আহমেদ সাবাব- শেরপুর:
  • আপডেট সময় : ০৭:১৮:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ১৩৪ বার পঠিত

 

শেরপুর জেলায় গারো, কোচ, হাজং, বানাই, ডালুসহ সাতটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। এদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা। এসব পরিবারের সুখ-দুঃখের গল্পটা চলে মাতৃভাষাতেই। কিন্তু ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনতে হাঁটতে হয় বাংলা ভাষার হাল
ধরে। তাই দিন দিন নিজ মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে, আক্ষেপ তাদের।

গারো ও কোচ ভাষা কোনোমতে টিকে থাকলেও অন্য ভাষা প্রায় বিলুপ্তির পথে।
প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় নিজস্ব বর্ণপরিচয়, চর্চা ও লেখাপড়ার সুযোগ না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা। কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষার বই থাকলেও শিক্ষক না থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বইগুলো পড়ানো যাচ্ছে না। ফলে শিকড় থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে এসব জাতিগোষ্ঠীর উত্তরসূরিরা।

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিশাল এলাকাজুড়ে গারো পাহাড় অবস্থিত। এখানেই বসবাস ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর। বেসরকারি সংস্থা
আইইডির আদিবাসী সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্যমতে, জেলায় গারো ১৬ হাজার ৫০০, হাজং ৪ হাজার ৭০০, হদি ১০ হাজার ৬০০, বর্মণ ১৭ হাজার, কোচ ৩ হাজার
৫০০, ডালু ১ হাজার ১০০, বানাই ১১০ জন রয়েছেন।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য নিজস্ব ভাষায় বই প্রকাশে ২০১০ সালে আইন প্রণীতহয়। সে মোতাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের জন্য ছয়টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ভাষায় বই প্রণয়ন করে। সেগুলো হলো
চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, সাঁওতাল ও সাদ্রি ভাষা। তবে এসব ভাষার বই পড়ানোর জন্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি বিদ্যালয়গুলোতে। ফলে বইগুলো শিশুদের
আদতে কোনো কাজেই আসছে না।

শিক্ষার্থী অনুসৎ হাজং বলেন, ‘আমরা স্কুলে খালি বাংলা ও ইংরেজি পড়ি। তাই আমরা বাড়িতে গিয়েও বাংলা ভাষায় কথা বলি। আমাগো ভাষা বলবার পাই না।’

স্কুলছাত্র সুব্রত বর্মণ বলেন, ‘আমাদের স্কুলে তো আমাদের ভাষায় পড়ায় না।
খালি বাংলা ভাষা পড়ায়। তাই আমরা আমাদের মায়ের ভাষা বলতেও পারি না, লিখতেও পারি না।’

প্রলয় হাজং বলেন, ‘আমাদের আগের লোকজনরা হাজং ভাষায় কথা বলতে পারলেও আমরা এখন পারি না। কারণ স্কুলে আমরা তো বাংলা ভাষা শিখে বড় হয়েছি। আমরা চাই সরকার স্কুলগুলোতে আমাদের ভাষায় শিক্ষাদান চালু করুক।’

সুকেন্দ্র চন্দ্র ডালু বলেন, ‘আমাদের ডালু গোষ্ঠী তো এহন হারিয়ে গেছে।আমরা কয়েকটা পরিবার আছি, কিন্তু ভাষাও হারিয়ে গেছে। কেউ এহন ডালু ভাষা পারি না।’

ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আদিবাসী নেতা প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, ‘আমাদের ভাষার বই সরকার দিলেও তা পাঠদানের জন্য কোনো শিক্ষক দেয়নি। আমরা চাই আমাদের ভাষা টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হোক। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনাই হলো, কোনো জনগোষ্ঠীর ভাষা হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। ভাষা আন্দোলনের চেতনা তখনই সার্থক হবে, যখন প্রতিটি জনগোষ্ঠী তার নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারবে, মাতৃভাষায় শিক্ষালাভ করতে পারবে,
শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারবে।’

সামাজিক সংগঠন জন-উদ্যোগের আহ্বায়ক শিক্ষাবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন,মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভ করা প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার। যেকোনো
মূল্যে সেই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার জানান, ‘পাহাড়ি উপজেলাগুলোতে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের ভাষায় পারদর্শী শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে
গারো পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনের জন্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনের ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা করা সম্ভব হবে।’

ট্যাগস :

হারিয়ে যাচ্ছে শেরপুরের নৃগোষ্ঠীদের নিজস্ব ভাষা

আপডেট সময় : ০৭:১৮:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

 

শেরপুর জেলায় গারো, কোচ, হাজং, বানাই, ডালুসহ সাতটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। এদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা। এসব পরিবারের সুখ-দুঃখের গল্পটা চলে মাতৃভাষাতেই। কিন্তু ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনতে হাঁটতে হয় বাংলা ভাষার হাল
ধরে। তাই দিন দিন নিজ মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে, আক্ষেপ তাদের।

গারো ও কোচ ভাষা কোনোমতে টিকে থাকলেও অন্য ভাষা প্রায় বিলুপ্তির পথে।
প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় নিজস্ব বর্ণপরিচয়, চর্চা ও লেখাপড়ার সুযোগ না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা। কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষার বই থাকলেও শিক্ষক না থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বইগুলো পড়ানো যাচ্ছে না। ফলে শিকড় থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে এসব জাতিগোষ্ঠীর উত্তরসূরিরা।

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিশাল এলাকাজুড়ে গারো পাহাড় অবস্থিত। এখানেই বসবাস ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর। বেসরকারি সংস্থা
আইইডির আদিবাসী সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্যমতে, জেলায় গারো ১৬ হাজার ৫০০, হাজং ৪ হাজার ৭০০, হদি ১০ হাজার ৬০০, বর্মণ ১৭ হাজার, কোচ ৩ হাজার
৫০০, ডালু ১ হাজার ১০০, বানাই ১১০ জন রয়েছেন।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য নিজস্ব ভাষায় বই প্রকাশে ২০১০ সালে আইন প্রণীতহয়। সে মোতাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের জন্য ছয়টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ভাষায় বই প্রণয়ন করে। সেগুলো হলো
চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, সাঁওতাল ও সাদ্রি ভাষা। তবে এসব ভাষার বই পড়ানোর জন্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি বিদ্যালয়গুলোতে। ফলে বইগুলো শিশুদের
আদতে কোনো কাজেই আসছে না।

শিক্ষার্থী অনুসৎ হাজং বলেন, ‘আমরা স্কুলে খালি বাংলা ও ইংরেজি পড়ি। তাই আমরা বাড়িতে গিয়েও বাংলা ভাষায় কথা বলি। আমাগো ভাষা বলবার পাই না।’

স্কুলছাত্র সুব্রত বর্মণ বলেন, ‘আমাদের স্কুলে তো আমাদের ভাষায় পড়ায় না।
খালি বাংলা ভাষা পড়ায়। তাই আমরা আমাদের মায়ের ভাষা বলতেও পারি না, লিখতেও পারি না।’

প্রলয় হাজং বলেন, ‘আমাদের আগের লোকজনরা হাজং ভাষায় কথা বলতে পারলেও আমরা এখন পারি না। কারণ স্কুলে আমরা তো বাংলা ভাষা শিখে বড় হয়েছি। আমরা চাই সরকার স্কুলগুলোতে আমাদের ভাষায় শিক্ষাদান চালু করুক।’

সুকেন্দ্র চন্দ্র ডালু বলেন, ‘আমাদের ডালু গোষ্ঠী তো এহন হারিয়ে গেছে।আমরা কয়েকটা পরিবার আছি, কিন্তু ভাষাও হারিয়ে গেছে। কেউ এহন ডালু ভাষা পারি না।’

ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আদিবাসী নেতা প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, ‘আমাদের ভাষার বই সরকার দিলেও তা পাঠদানের জন্য কোনো শিক্ষক দেয়নি। আমরা চাই আমাদের ভাষা টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হোক। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনাই হলো, কোনো জনগোষ্ঠীর ভাষা হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। ভাষা আন্দোলনের চেতনা তখনই সার্থক হবে, যখন প্রতিটি জনগোষ্ঠী তার নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারবে, মাতৃভাষায় শিক্ষালাভ করতে পারবে,
শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারবে।’

সামাজিক সংগঠন জন-উদ্যোগের আহ্বায়ক শিক্ষাবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন,মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভ করা প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার। যেকোনো
মূল্যে সেই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার জানান, ‘পাহাড়ি উপজেলাগুলোতে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের ভাষায় পারদর্শী শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে
গারো পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনের জন্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনের ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা করা সম্ভব হবে।’