হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার শৈল্পিক কারিগর
- আপডেট সময় : ১১:৫২:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অগাস্ট ২০২৩ ৩৯১ বার পঠিত
‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই।’ যে এমন সুনিপুণ কারিগর সে তো শিল্পের বড়াই করতেই পারে। তবে কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী কবিতাটির মূল চরিত্র আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নিপুণ কারিগর বাবুই পাখি আজ বিলুপ্তির পথে।
কয়েক বছর আগেও প্রায় সবখানে চোখে পড়তো চিরচেনা এই পাখি। কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে তাল পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখির বাসা। নির্বিচারে তাল ও সুপারি গাছ কাটায় এবং বসবাস উপযোগী পরিবেশ না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার শৈল্পিক কারিগর ‘বাবুই পাখি’। ফলে কিচিরমিচির শব্দে আর মুখরিত হয় না গ্রামবাংলার জনপদ।
একসময় বিভিন্ন প্রজাতির বাবুই পাখি দেখা যেত। এরমধ্যে অনেক প্রজাতি এখন বিলুপ্তির পথে। টিকে আছে কিছু দেশি বাবুই। বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখির পছন্দের তাল, নারিকেল, সুপারি ও খেজুর গাছ কমতে থাকায় আবাসস্থল সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও কৃষিকাজে কীটনাশক ব্যবহার করায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এ পাখি।
তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা এ যেন একই বৃন্তে দুটি ফুল। একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে নিয়ে ভাবা যায় না। শুধু তালগাছকে নিয়ে ভাবলে, বাবুই পাখির বাসা এমনিতেই যেন চোখে ভেসে আসে। নিপুণ শিল্পকর্মে গড়ে তোলা কুঁড়েঘর সদৃশ অপরূপ দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত বাসা। এসব বাসা যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি মজবুতও বটে। যে কারণে প্রচণ্ড ঝড়েও ছিঁড়ে পড়ে না বা পানি প্রবেশ করতে পারে না। বাবুই পাখি অত্যন্ত পরিশ্রম করে তাল, নারিকেল, খেজুর গাছসহ আখ ক্ষেতে দলবেঁধে বাসা বাঁধে। এরা সাধারণত তালপাতা, ঝাউ, খড়, ও কাশবনের লতাপাতা দিয়েই উঁচু তালগাছের ময়ুর পেখুম ঢালে বাসা তৈরি করে। বাবুই পাখির শক্ত বুননের বাসা শিল্পের অনন্য সৃষ্টি।
পরিবেশবাদীরা মনে করেন, এক শ্রেণির শিকারি নির্বিঘ্নে বাবুই পাখিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শিকার করছে। ফলে বাবুই পাখিসহ অন্যান্য অতিথি পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। বাবুই পাখির শৈল্পিক নিদর্শন টিকিয়ে রাখতে জরুরী ভিত্তিতে উদ্যোগ নেয়া দরকার।