ঢাকা ১০:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পত্রিকার প্রকাশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠের প্রকাশকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান পাইকগাছায় দু’পক্ষের বিরোধ ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের ৩জন গুরুতর জখম রাজবাড়ীতে শিক্ষকদের লাঞ্চিতের প্রতিবাদে মানববন্ধন গোয়ালন্দ পাক দরবার শরিফ নিয়ে গুজব ছড়ানো সংবাদের প্রতিবাদ প্রথমবারের মতো সেনাসদর পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংসদ থেকে যত টাকা খোয়া গেছে আশুলিয়ায় ধর্ষকের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে ভুক্তভোগী নারীর সংবাদ সম্মেলন দৌলতদিয়া- পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ৭ জেলে নিখোঁজ 

সৈয়দপুরে দর্শক শূন্য তামান্না সিনেমা হল

জয়ন্ত রায়- নীলফামারী
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৩:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ৬৪ বার পঠিত

সারাদেশে মতো সৈয়দপুরেও একসময় সিনেমা হল ছিল বিনোদনের একটি মাধ্যম। বিশেষ কোনো উপলক্ষে বা বিশেষ ছবি মুক্তি পেলে মানুষ সিনেমা হলে লাইন ধরত।

টিকিট পেতেও অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। বিশেষ কোনো দৃশ্য পর্দায় ভেসে উঠলে করতালিতে ভরে যেত পুরো হল।

সেই সিনেমা হল এখন দর্শকখরা। সৈয়দপুর শহরে ৪ টি সিনেমা হল ছিলো বিভিন্ন সময়ে হলের দর্শক কমে যাওয়ায় পযাক্রমে সিনেমা হল গুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমান সৈয়দপুর শহরে একটি মাত্র সিনেমা হল রয়েছে যেতি তামান্না সিনেমা হল নামে সবার কাছে পরিচিত সেই হলটি দর্শক খরা হওয়ায় প্রায় বন্ধোর পথে যাচ্ছে।

সৈয়দপুর শহরের চারটি সিনেমা হলের মধ্যে তিনটিই বন্ধ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। শহরের অভিজাত সিনেমা হল ছিল ‘বিজলী টকিজ’। ওই সিনেমা হলটিতে “ছুটির ঘন্টা” ছায়াছবিটি কয়েক মাস ধরে চলে। তারপরও দর্শকদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বাস্তব চিত্র এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। দর্শক সংকটে বিজলী টকিজ এখন বন্ধ।

সেখানে বর্তমানে গড়ে তোলা হচ্ছে অত্যাধিক সুপার মার্কেট ‘চৌধুরী টাওয়ার’। একই অবস্থা লিবার্টি সিনেমা হলেরও। সেখানেও গড়ে তোলা হয়েছে সৈয়দপুর শিল্প সাহিত্য সংসদ সুপার মার্কেট। আর সৈয়দপুর সেনানিবাসের গ্যারিসন সিমেনা হলটিও বন্ধ করে সেখানে সেনা কমিউনিটি সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর জনপদের নীলফামারীর বাণিজ্য প্রধান ও শ্রমিক অধ্যূষিত উপজেলা শহর সৈয়দপুর। এক সময় এ শহরটিতে বিজলী টকিজ, লিবার্টি, গ্যারিসন, তামান্নাসহ চারটি সিনেমা হল ছিল।

আর এসব সিনেমা হলের প্রতিটি ‘শো’ পরিপূর্ণ থাকতো দর্শকে। শহরের মানুষ ছাড়াও প্রত্যন্ত পল্লীর সব বয়সী মানুষ সিনেমা দেখতে ভীড় করতো সিনেমা হলগুলোতে। সিনেমা হলে প্রবেশের টিকিট সংগ্রহে দর্শকদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলতো।

সিনেমা হলগুলোতে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়ে দম বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। সপ্তাহের প্রতিটি দিনই জমজমাট থাকতো সিনেমা হলগুলো। দর্শকদের চাহিদার কারণে অনেক বাংলা ছায়াছবি মাসের পর মাস চলতো শহরের সিনেমা হলগুলোতে। তারপরও দর্শকদের কোন কমতি ছিল না। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই।

বর্তমানে ‘নীল ধন সবে মনি’ হয়ে আছে একমাত্র শহরের শের-এ-বাংলা সড়কের তামান্না সিনেমা হল। বর্তমানে এটি ভাড়ায় নিয়ে চালাচ্ছেন জনৈক মোশারফ হোসেন আকাশ। দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সিনেমা হল ব্যবসায় জড়িত তার পরিবার। মঙ্গলবার তামান্না সিনেমা হল চত্বরে সিনেমা ব্যবসার বর্তমান অবস্থা নিয়ে দীর্ঘ সময় কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে প্রায় দুই বছর বন্ধ ছিল সিনেমা হল।

পরবর্তীতে চালু করা হলেও সিনেমা হলে তেমন আশানুরূপ দর্শক আসেনি।

তামান্না সিনেমা হলের পরিচালক মাহবুব আলী ঝন্টু বলেন, বর্তমানে ভাল জীবনকাহিনী ও মানসম্পন্ন বাংলা ছায়াছবি সংকট, কেবল টিভি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, আকাশ সংস্কৃতি, দেশীয় একাধিক টিভি চ্যানেল, ভারতীয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে অনেক সিরিয়াল প্রচারিত হওয়ায় মানুষ সিনেমা হলগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এসব নানাবিধ কারণে মানুষ আর সিনেমা হলমুখী হচ্ছেন না। ফলে দর্শকদের অভাবে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে দুই হাজার সালের পর থেকে সৈয়দপুরে সিনেমা হল ব্যবসায় ধস নামে।

তিনি আরো বলেন সৈয়দপুর শহরের মেয়ে সাদিয়া নাবিলা অভিনীত সিনেমায়ও দর্শকের খরা চলছে। যদিও অনেক প্রত্যাশা বহুল প্রতীক্ষিত ‘ব্লাক ওয়ার’’-পুলিশি অ্যাকশন থ্রিলার ধর্মী `মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমার দ্বিতীয় পার্ট `ব্ল্যাক ওয়ার’ ছবিটি প্রদর্শণের জন্য এনেছি। কিন্তু তাতেও হলমুখী হয়নি আশানুরূপ দর্শক।

মঙ্গলবার , দুপুর বারোটার শোতে দর্শক ০৭ জন, আর বিকেলের শো’তে দর্শক ১১ জন,সন্ধ্যার শোতে দর্শক ০৩ জন আর রাত্রির শো বন্ধ ছিল । এতে এসেছে মাত্র ২ হাজার ১ শত টাকা।

তিনি আরো জানান, অভিনয় শিল্পীদের মধ্যে সাদিয়া নাবিলা সৈয়দপুর শহরে মেয়ে। তাকে নিয়ে অনেক প্রচার প্রচারণা করা হয়। কিন্তুু তাতেও সাড়া মেলেনি। দর্শক ফিরেনি সিনেমা হলে। তিনি জানান, প্রতি মাসে সিনেমা হল ভাড়া, কাস্টমস্ ভ্যাট, পৌর কর, কর্মচারী, বিদ্যূৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে। এভাবে লোকসান দিয়ে কি আর হল ব্যবসায় করা সম্ভব।যদি আমারা সরকারে কাছে সহযোগিতা পাই তাহলে সৈয়দপুরের এই ঐতিহ্যবাহী এই হলটি কে টিকিয়ে রাখতে পারবো।

ট্যাগস :

সৈয়দপুরে দর্শক শূন্য তামান্না সিনেমা হল

আপডেট সময় : ০৮:৩৩:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

সারাদেশে মতো সৈয়দপুরেও একসময় সিনেমা হল ছিল বিনোদনের একটি মাধ্যম। বিশেষ কোনো উপলক্ষে বা বিশেষ ছবি মুক্তি পেলে মানুষ সিনেমা হলে লাইন ধরত।

টিকিট পেতেও অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। বিশেষ কোনো দৃশ্য পর্দায় ভেসে উঠলে করতালিতে ভরে যেত পুরো হল।

সেই সিনেমা হল এখন দর্শকখরা। সৈয়দপুর শহরে ৪ টি সিনেমা হল ছিলো বিভিন্ন সময়ে হলের দর্শক কমে যাওয়ায় পযাক্রমে সিনেমা হল গুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমান সৈয়দপুর শহরে একটি মাত্র সিনেমা হল রয়েছে যেতি তামান্না সিনেমা হল নামে সবার কাছে পরিচিত সেই হলটি দর্শক খরা হওয়ায় প্রায় বন্ধোর পথে যাচ্ছে।

সৈয়দপুর শহরের চারটি সিনেমা হলের মধ্যে তিনটিই বন্ধ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। শহরের অভিজাত সিনেমা হল ছিল ‘বিজলী টকিজ’। ওই সিনেমা হলটিতে “ছুটির ঘন্টা” ছায়াছবিটি কয়েক মাস ধরে চলে। তারপরও দর্শকদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বাস্তব চিত্র এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। দর্শক সংকটে বিজলী টকিজ এখন বন্ধ।

সেখানে বর্তমানে গড়ে তোলা হচ্ছে অত্যাধিক সুপার মার্কেট ‘চৌধুরী টাওয়ার’। একই অবস্থা লিবার্টি সিনেমা হলেরও। সেখানেও গড়ে তোলা হয়েছে সৈয়দপুর শিল্প সাহিত্য সংসদ সুপার মার্কেট। আর সৈয়দপুর সেনানিবাসের গ্যারিসন সিমেনা হলটিও বন্ধ করে সেখানে সেনা কমিউনিটি সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর জনপদের নীলফামারীর বাণিজ্য প্রধান ও শ্রমিক অধ্যূষিত উপজেলা শহর সৈয়দপুর। এক সময় এ শহরটিতে বিজলী টকিজ, লিবার্টি, গ্যারিসন, তামান্নাসহ চারটি সিনেমা হল ছিল।

আর এসব সিনেমা হলের প্রতিটি ‘শো’ পরিপূর্ণ থাকতো দর্শকে। শহরের মানুষ ছাড়াও প্রত্যন্ত পল্লীর সব বয়সী মানুষ সিনেমা দেখতে ভীড় করতো সিনেমা হলগুলোতে। সিনেমা হলে প্রবেশের টিকিট সংগ্রহে দর্শকদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলতো।

সিনেমা হলগুলোতে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়ে দম বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। সপ্তাহের প্রতিটি দিনই জমজমাট থাকতো সিনেমা হলগুলো। দর্শকদের চাহিদার কারণে অনেক বাংলা ছায়াছবি মাসের পর মাস চলতো শহরের সিনেমা হলগুলোতে। তারপরও দর্শকদের কোন কমতি ছিল না। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই।

বর্তমানে ‘নীল ধন সবে মনি’ হয়ে আছে একমাত্র শহরের শের-এ-বাংলা সড়কের তামান্না সিনেমা হল। বর্তমানে এটি ভাড়ায় নিয়ে চালাচ্ছেন জনৈক মোশারফ হোসেন আকাশ। দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সিনেমা হল ব্যবসায় জড়িত তার পরিবার। মঙ্গলবার তামান্না সিনেমা হল চত্বরে সিনেমা ব্যবসার বর্তমান অবস্থা নিয়ে দীর্ঘ সময় কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে প্রায় দুই বছর বন্ধ ছিল সিনেমা হল।

পরবর্তীতে চালু করা হলেও সিনেমা হলে তেমন আশানুরূপ দর্শক আসেনি।

তামান্না সিনেমা হলের পরিচালক মাহবুব আলী ঝন্টু বলেন, বর্তমানে ভাল জীবনকাহিনী ও মানসম্পন্ন বাংলা ছায়াছবি সংকট, কেবল টিভি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, আকাশ সংস্কৃতি, দেশীয় একাধিক টিভি চ্যানেল, ভারতীয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে অনেক সিরিয়াল প্রচারিত হওয়ায় মানুষ সিনেমা হলগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এসব নানাবিধ কারণে মানুষ আর সিনেমা হলমুখী হচ্ছেন না। ফলে দর্শকদের অভাবে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে দুই হাজার সালের পর থেকে সৈয়দপুরে সিনেমা হল ব্যবসায় ধস নামে।

তিনি আরো বলেন সৈয়দপুর শহরের মেয়ে সাদিয়া নাবিলা অভিনীত সিনেমায়ও দর্শকের খরা চলছে। যদিও অনেক প্রত্যাশা বহুল প্রতীক্ষিত ‘ব্লাক ওয়ার’’-পুলিশি অ্যাকশন থ্রিলার ধর্মী `মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমার দ্বিতীয় পার্ট `ব্ল্যাক ওয়ার’ ছবিটি প্রদর্শণের জন্য এনেছি। কিন্তু তাতেও হলমুখী হয়নি আশানুরূপ দর্শক।

মঙ্গলবার , দুপুর বারোটার শোতে দর্শক ০৭ জন, আর বিকেলের শো’তে দর্শক ১১ জন,সন্ধ্যার শোতে দর্শক ০৩ জন আর রাত্রির শো বন্ধ ছিল । এতে এসেছে মাত্র ২ হাজার ১ শত টাকা।

তিনি আরো জানান, অভিনয় শিল্পীদের মধ্যে সাদিয়া নাবিলা সৈয়দপুর শহরে মেয়ে। তাকে নিয়ে অনেক প্রচার প্রচারণা করা হয়। কিন্তুু তাতেও সাড়া মেলেনি। দর্শক ফিরেনি সিনেমা হলে। তিনি জানান, প্রতি মাসে সিনেমা হল ভাড়া, কাস্টমস্ ভ্যাট, পৌর কর, কর্মচারী, বিদ্যূৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে। এভাবে লোকসান দিয়ে কি আর হল ব্যবসায় করা সম্ভব।যদি আমারা সরকারে কাছে সহযোগিতা পাই তাহলে সৈয়দপুরের এই ঐতিহ্যবাহী এই হলটি কে টিকিয়ে রাখতে পারবো।