গাছ মানুষের পরম বন্ধু গাছ যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, তেমনি আর্থিকভাবেও উপকার করে। শ্যামনগর উপজেলায় গাছের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করছে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে গাছকে হত্যা করার প্রতিযোগিতা চলছে যেন ব্যানার-ফেস্টুন ও সাইনবোর্ডে।
সাতক্ষীরা জেলা সহ বিভিন্ন উপজেলায় সড়ক-মহাসড়কের পাশে সরকারি গাছে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের প্রচার-প্রচারণার অসংখ্য, সাইনবোর্ডের বিজ্ঞাপন।এসব ব্যানার, ফেস্টুন, বিজ্ঞাপন ঝোলানো হয়েছে লোহার পেরেক, তারকাটা ঠুকে। এমনভাবে গাছে পেরেক ঠোকাচ্ছে,তা দেখার কেউ নেই।
এসব পোস্টার, ব্যানার ও বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে গাছ, তা আর চেনার উপায় থাকে না।এটা খুবই বিপজ্জনক একটি ব্যাপার।পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয়, তা দিয়ে পানি ও এর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব ঢোকে।এতে গাছের ওই জায়গায় দ্রুত পচন ধরে। ফলে তার খাদ্য ও পানি শোষণপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এতে গাছ মারাও যেতে পারে। তাই কোনো গাছে পেরেক ঠোকা মানে ওই গাছের চরম ক্ষতি করা। যেখানে আমাদের বেশি করে গাছ লাগানো এবং গাছের পরিচর্যা করা প্রয়োজন, সেখানে উল্টো গাছের ক্ষতি করে চলছে।
এভাবে রাজনৈতিক দলের প্রচারণা বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য গাছ ব্যবহার করা বন্ধ করার প্রয়োজন। একান্ত প্রয়োজন দেখা দিলে গাছের গায়ে তার বা রশি দিয়ে তা বেঁধে ব্যানার, ফেস্টুন লাগানো যেতে পারে। কোনোভাবেই পেরেক ব্যবহার করা যাবে না। গাছে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড না লাগানোর বিষয়ে ২০০২ সালের ৭ জুলাই জাতীয় সংসদে একটি আইন পাস হয়। কিন্তু শুধু কাগজপত্রেই আইনটি আছে। বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। এই আইনটি সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে এবং এর প্রয়োগ ঘটাতে হবে।গাছ রক্ষায় প্রয়োজনে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। তা না হলে গাছের গায়ে পেরেক ঠোকা কখনোই বন্ধ হবে না। পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে উদ্যোগ নিতে হবে।
নীলডুমুর পরিবেশ ক্লাবের সভাপতি আব্দুল হালিম বলেন, বৃক্ষের কষ্টটা আমরা কেউ উপলব্ধি করি না। প্রতিনিয়ত বৃক্ষ বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে আমরা বাধাগ্রস্ত করছি। বৃক্ষ যে অক্সিজেন দিয়ে মানবজাতিকে বাঁচিয়ে রাখে এবং বৃক্ষেরও যে প্রাণ আছে,তা মানুষ ভুলেই গেছে। তিনি আরো বলেন, আগে দেখা যেত গাছে গাছে শালিক, দোয়েল ও কাঠ ঠোকরা সহ বিভিন্ন ধরনের পাখির বাসা বাধ্য আর এখন দেখি গাছে বিজ্ঞাপন বোর্ডে ঢাকা। এসব বিজ্ঞাপন লাগাতে পেরেক বা তারকাঁটা ঠুকে গাছের সাথে চরম নিষ্ঠুরতা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেওয়া দরকার। গাছে পেরেক লাগিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ করা উচিত।
শ্যামনগর সামাজিক বন বিভাগের ফরেস্টার শহিদুর রহমান বলেন, গাছে পেরেক বা তারকাঁটা ঠুকে বিজ্ঞাপন প্রচার সরকারিভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পেরেক ঠুকে গাছে গাছে পোস্টার- ফেস্টুন লাগানোর বিরুদ্ধে আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে এটা নিয়ে সাফল্য অর্জন করতে পারিনি। প্রশাসনিক তৎপরতায় এই মূলত সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের সবারই এর কাজে সাফল্য আসবে না, নাগরিক সচেতনতাও দরকার।