ঢাকা ০৩:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পত্রিকার প্রকাশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠের প্রকাশকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান পাইকগাছায় দু’পক্ষের বিরোধ ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের ৩জন গুরুতর জখম রাজবাড়ীতে শিক্ষকদের লাঞ্চিতের প্রতিবাদে মানববন্ধন গোয়ালন্দ পাক দরবার শরিফ নিয়ে গুজব ছড়ানো সংবাদের প্রতিবাদ প্রথমবারের মতো সেনাসদর পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংসদ থেকে যত টাকা খোয়া গেছে আশুলিয়ায় ধর্ষকের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে ভুক্তভোগী নারীর সংবাদ সম্মেলন দৌলতদিয়া- পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ৭ জেলে নিখোঁজ 

মোড়া তৈরী করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছে নারীরা

মো: আরিফুল ইসলাম- খাগড়াছড়ি:
  • আপডেট সময় : ০৫:০১:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ মার্চ ২০২৪ ১৫৭ বার পঠিত

বাঁশ আর বেত। এই দুইয়ের মিশেলে নিপুণ হাতে বানিয়ে চলেছেন একেকটি মোড়া। এভাবেই গত এক দশকেরও বেশী সময় ধরে মোড়া তৈরি করে টেনেটুনে চলা সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা এনেছেন নারীরা। এসব নারীদের হাত ধরে শুধু পরিবার নয়, বদলে গেছে গোটা দুটি গ্রাম।

বলছিলাম মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরের নিভৃত পল্লী কাজীপাড়া ও হাতিয়াপাড়া গ্রামের সংগ্রামী নারীদের কথা।

তীব্র ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম এই দুইয়ের মিশেলে এ জনপদের নারীরা হাটছেন সফলতার পথে। পিছিয়েপড়া এ জনপদের নারীদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় কাজীপাড়া ও হাতিয়াপাড়ার প্রতিটি বাড়ি হয়ে উঠেছে ছোট ছোট কুটির শিল্প।

মাটিরাঙ্গার কাজীপাড়ায় ঘুরে দেখা গেছে বাড়ির উঠানে মোড়া তৈরি করছেন আয়েশা আক্তার। মায়ের সাথে বসে নিপুন হাতের ছোঁয়ায় বাঁশ-বেতের সমন্বয়ে মোড়া তৈরী করছে কলেজ পড়ুয়া আখি। শুধুমাত্র আখিই নয়, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া এমন অনেকেই লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে মায়ের সাথে মোড়া তৈরীর কাজ করে থাকে।

মোড়া বানানোর ফাঁকে ফাঁকে কথা হলে আয়শা বেগম জানান, দীর্ঘ ৭/৮ বছর ধরে মোড়া তৈরি করছেন। আগে একজনের আয়ে সংসার চলতো। আর এখন স্বামীর পাশাপাশি তিনিও আয় করছেন। সংসারের খরচের পর বাড়তি টাকা সঞ্চয় করছেন। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখেই আছেন।

একটু দূরেই পাশের বাড়িতে মোড়া তৈরি করছেন দুই জা আকলিমা বেগম ও আমেনা বেগম। তারা বলেন, এখানকার প্রতিটি বাড়িতেই মোড়া তৈরি করা হয়। পরিবারের কাজ শেষে সবাই মোড়া তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। কারোরই যেন অবসর নেই। মোড়া তৈরি করে সকলের পরিবারেই কমবেশী আর্থিক স্বচ্ছলতা এসছে বলে জানালেন আকলিমা বেগম।

অবসর সময়ে মোড়া তৈরী করে কাজীপাড়া ও হাতিয়াপাড়ার নারীরা ঘুরে দাড়িয়েছে করে হাতিয়াপাড়ার জেসমিন আক্তার বলেন, আমরা নারী, আমরাও পারি। ইচ্ছাশক্তি থাকলে নারীরাও পারে পরিবারের স্বচ্ছলতায় ভুমিকা রাখতে।

আকার ও মান অনুযায়ী প্রতি জোড়া মোড়া বিক্রি হয় ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০ টাকায়। প্রতি সপ্তাহে ৩-৪ জোড়া মোড়া তৈরি করে একেকজন নারী। যা থেকে একেকজন সপ্তাহে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা আয় করে থাকেন।

এসব নারীদের নিপুন হাতে তৈরি এ-সব মোড়া ইতোমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীসহ সমতলের জেলাগুলোতে। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করে এসব মোড়া সমতলের জেলাগুলোতে বাজারজাত করার মতো কাজটি করে থাকেন স্থানীয় পাইকার মো: দেলোয়ার হোসেন। দেশের সমতলের বাজারে এখানকার মোড়ার ব্যাপক চাহিদার কথা জানিয়েছেন তিনি।

কাজীপাড়া ও হাতিয়াপাড়ার নারীরা বোঝা না হয়ে সংসারের হাল ধরেছেন মন্তব্য করে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: আলাউদ্দিন লিটন বলেন, মোড়া তৈরিতে নিয়োজিত নারীরা যথাযথ প্রশিক্ষণ পেলে এটি পাহাড়ের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে গড়ে উঠবে।

গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীন বলেন, নারীরাও পারে এটার অনন্য উদাহরণ গড়েছে কাজীপাড়া ও হাতিয়াপাড়ার নারীরা। তারা শুধুমাত্র পারিবারিক কাজে নিজেদের আটকে না রেখে অবসর সময়ে মোড়া তৈরী করে বাড়তি আয় করছে। দেশের অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখা মোড়াকে শিল্প হিসেবে ঘোষনার দাবী জানান তিনি।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডেজী চক্রবর্তী বলেন, পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতায় ভূমিকা রাখা এসব নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। তাদেরকে ঋণ প্রদানসহ মোড়া শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। মোড়াকে বিশেষ শিল্প হিসেবে ঘোষণা করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

মোড়া তৈরী করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছে নারীরা

আপডেট সময় : ০৫:০১:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ মার্চ ২০২৪

বাঁশ আর বেত। এই দুইয়ের মিশেলে নিপুণ হাতে বানিয়ে চলেছেন একেকটি মোড়া। এভাবেই গত এক দশকেরও বেশী সময় ধরে মোড়া তৈরি করে টেনেটুনে চলা সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা এনেছেন নারীরা। এসব নারীদের হাত ধরে শুধু পরিবার নয়, বদলে গেছে গোটা দুটি গ্রাম।

বলছিলাম মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরের নিভৃত পল্লী কাজীপাড়া ও হাতিয়াপাড়া গ্রামের সংগ্রামী নারীদের কথা।

তীব্র ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম এই দুইয়ের মিশেলে এ জনপদের নারীরা হাটছেন সফলতার পথে। পিছিয়েপড়া এ জনপদের নারীদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় কাজীপাড়া ও হাতিয়াপাড়ার প্রতিটি বাড়ি হয়ে উঠেছে ছোট ছোট কুটির শিল্প।

মাটিরাঙ্গার কাজীপাড়ায় ঘুরে দেখা গেছে বাড়ির উঠানে মোড়া তৈরি করছেন আয়েশা আক্তার। মায়ের সাথে বসে নিপুন হাতের ছোঁয়ায় বাঁশ-বেতের সমন্বয়ে মোড়া তৈরী করছে কলেজ পড়ুয়া আখি। শুধুমাত্র আখিই নয়, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া এমন অনেকেই লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে মায়ের সাথে মোড়া তৈরীর কাজ করে থাকে।

মোড়া বানানোর ফাঁকে ফাঁকে কথা হলে আয়শা বেগম জানান, দীর্ঘ ৭/৮ বছর ধরে মোড়া তৈরি করছেন। আগে একজনের আয়ে সংসার চলতো। আর এখন স্বামীর পাশাপাশি তিনিও আয় করছেন। সংসারের খরচের পর বাড়তি টাকা সঞ্চয় করছেন। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখেই আছেন।

একটু দূরেই পাশের বাড়িতে মোড়া তৈরি করছেন দুই জা আকলিমা বেগম ও আমেনা বেগম। তারা বলেন, এখানকার প্রতিটি বাড়িতেই মোড়া তৈরি করা হয়। পরিবারের কাজ শেষে সবাই মোড়া তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। কারোরই যেন অবসর নেই। মোড়া তৈরি করে সকলের পরিবারেই কমবেশী আর্থিক স্বচ্ছলতা এসছে বলে জানালেন আকলিমা বেগম।

অবসর সময়ে মোড়া তৈরী করে কাজীপাড়া ও হাতিয়াপাড়ার নারীরা ঘুরে দাড়িয়েছে করে হাতিয়াপাড়ার জেসমিন আক্তার বলেন, আমরা নারী, আমরাও পারি। ইচ্ছাশক্তি থাকলে নারীরাও পারে পরিবারের স্বচ্ছলতায় ভুমিকা রাখতে।

আকার ও মান অনুযায়ী প্রতি জোড়া মোড়া বিক্রি হয় ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০ টাকায়। প্রতি সপ্তাহে ৩-৪ জোড়া মোড়া তৈরি করে একেকজন নারী। যা থেকে একেকজন সপ্তাহে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা আয় করে থাকেন।

এসব নারীদের নিপুন হাতে তৈরি এ-সব মোড়া ইতোমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীসহ সমতলের জেলাগুলোতে। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করে এসব মোড়া সমতলের জেলাগুলোতে বাজারজাত করার মতো কাজটি করে থাকেন স্থানীয় পাইকার মো: দেলোয়ার হোসেন। দেশের সমতলের বাজারে এখানকার মোড়ার ব্যাপক চাহিদার কথা জানিয়েছেন তিনি।

কাজীপাড়া ও হাতিয়াপাড়ার নারীরা বোঝা না হয়ে সংসারের হাল ধরেছেন মন্তব্য করে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: আলাউদ্দিন লিটন বলেন, মোড়া তৈরিতে নিয়োজিত নারীরা যথাযথ প্রশিক্ষণ পেলে এটি পাহাড়ের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে গড়ে উঠবে।

গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীন বলেন, নারীরাও পারে এটার অনন্য উদাহরণ গড়েছে কাজীপাড়া ও হাতিয়াপাড়ার নারীরা। তারা শুধুমাত্র পারিবারিক কাজে নিজেদের আটকে না রেখে অবসর সময়ে মোড়া তৈরী করে বাড়তি আয় করছে। দেশের অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখা মোড়াকে শিল্প হিসেবে ঘোষনার দাবী জানান তিনি।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডেজী চক্রবর্তী বলেন, পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতায় ভূমিকা রাখা এসব নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। তাদেরকে ঋণ প্রদানসহ মোড়া শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। মোড়াকে বিশেষ শিল্প হিসেবে ঘোষণা করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।