ভ্যান চুরির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিহত সিরাজ হাওলাদার এর বড় ভাই মোঃ মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ১২জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ৮/১০জনকে আসামী করে খানজাহান আলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নং-২, তাং-৪/৯/২০২৪)।
পুলিশ মামলার এজাহারভুক্ত আসামী মোঃ মিলন(৪১)কে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছেন। নিহত সিরাজ হাওলাদারের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার লাশ হাতে পান তার পরিবার।
পরে আছরবাদ মানববন্ধন শেষে যোগিপোল ৭নং ওয়ার্ড ঈদগাহে জানাযা করে যোগিপোল কবরস্থানে সিরাজের দাফন সম্পন্ন হয়।
এদিকে নির্মম এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সর্বস্থরের এলাকাবাসী নিহতের লাশ নিয়ে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।
মামালার এজাহার সুত্রে জানাগেছে, নিহত সিরাজ হাওলাদার একটি ভ্যান ক্রয়ের জন্য গত ৩ সেপ্টেম্বর আশা সমিতি থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ তোলে। ঐ দিন রাতে ১০টার দিকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা বাড়ীর সামনে এসে সিরাজের নাম ধরে ডাকাডাকি করে। ভয়ে কেহ বাসা থেকে বাহির না হওয়ায় তারা সকালে দেখা করতে বলে চলে যায় ।
পরবর্তিতে ৪ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক সোয়া ৪টার দিকে মোঃ জাকারিয়া ওরফে জাকার(২৫)সহ অজ্ঞাতনামা ৮/১০জন সিরাজের ঘরের দরজা ভেঙ্গে রুমে প্রবেশ করে দেশীয় অস্ত্র হাসুয়া দিয়ে সিরাজকে এলোপাতাড়ী ভাবে মারপিট করে জখম করে। জাকারিয়া জাকারের হাতে থাকা হাসুয়া দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সিরাজের মাথায় কোপ দিলে সে রক্তাক্ত জখম হয়।
এ সময় তার স্ত্রী ঠেকাতে আসলে তাকেও নোংরা ভাবে আঘাত করা হয়। হামলাকারীরা ঘরের আসবাপত্র ভাংচুর করে অয়ারড্রপের মধ্যে থাকা সমিতি থেকে তোলা নগদ ৪০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে সিরাজকে মারতে মারতে টেনে হিচড়ে ধরে নিয়ে যায়।
পরবর্তিতে স্থানীয় ও থানা পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে শিরোমণি দক্ষিণপাড়া কালভাট মোড় থেকে সকালে সিরাজের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ সময় তার লাশের পাশে দিদার সরদার নামের আরো এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে পুলিশ।
এই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মনিরুল ইসলাম হিরা বাদী হয়ে শিরোমণি দক্ষিণপাড়ার তোয়েবের পুত্র মোঃ জাকারিয়া জাকার(২৫), একই এলাকার হাসিনার পুত্র জুয়েল(৩২), হান্নান ফকিরের পুত্র মোঃ মাহাবুব(৩৬), যোগিপোলের বাবুলের পুত্র বিল্লাল(২২), শিরোমণি দক্ষিণপাড়ার হরমুজের পুত্র ফরহাদ(৩৮), একই এলাকার হাবিবের পুত্র আসিফ(২০), ইদ্রিস শেখের পুত্র মাসুদ শেখ(২৯), যোগিপোলের মৃত আইযুব শেখের পুত্র মফিজুল শেখ(৩৮), একই এলাকার সোরাব ফরাজীর পুত্র হাসান ফরাজী((৪২), হাবিবুর রহমানের পুত্র মোঃ মিলন(৪১), ইমান আলীর পুত্র সজিব শেখ(২২) এবং যোগিপোল খোকা ফকিরের পুত্র ইউপি সদস্য মোঃ হাফিজ শেখ(৫০)সহ অজ্ঞাতনামা ৮/১০জনকে আসামী করে মামলা করেছেন।
অপরদিকে ভ্যান চুরির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হামলার স্বিকার গুরুতর আহত দিদার সরদারের অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সুত্রে জানাগেছে।
এদিকে ঘুমান্ত অবস্থায় সিরাজকে তুলে নিয়ে পরিবারের স্ত্রী ও শিশু সন্তানের সামনে নির্মমভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নিহতের লাশ নিয়ে মানববন্ধন করেছে যোগিপোলের নারী-পুরুষসহ সর্বস্থরের মানুষ। মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন ইউপি সদস্য শেখ আমজাদ হোসেন, খানজাহান আলী থানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ, যোগিপোল ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব আতাউর মোড়ল, রেজাউল মোড়ল, শওকত মোড়ল, নিহতের ভাই মনিরুল ইসলাম হিরা, মাওলানা শামসুর রহমান, পলাশ মোল্যাসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। মানববন্ধনে এলাকার শতশত নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করে হত্যাকারীদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান।
নিহতের জানাযা যোগিপোল ৭নং ওয়ার্ড ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয় পরে পার্শবর্তি যোগিপোল কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে খানজাহান আলী থানার ওসি(তদন্ত) মোঃ নাহিদ হাসান মৃধা বলেন, সিরাজকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ১২জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৮/১০জনকে আসামী করে নিহতের ভাই মামলা করেছে। মামলার এজাহার ভুক্ত একজন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রæত বাকী আসামীদের গ্রেফতার করা হবে।