ঢাকা ০৭:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
দেবহাটায় মাছের পাশাপাশি ভেঁড়িতে অসময়ে তরমুজ চাষে স্বাবলম্বী গোলাম রব্বানী তথ্যমেলায় মুজিববর্ষের লিফলেট ও শেখ হাসিনার বাণী প্রচার: আগামীকাল খানসামায় আসছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বালিয়াকান্দিতে উপজেলা পর্যায়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন পাইকগাছায় বিপুল পরিমাণ পলিথিন ব্যাগ ও কারেন্ট জাল জব্দ পাইকগাছার গদাইপুরে গনশুনানী অনুষ্ঠিত জনগণের আস্থা পেলে ধানের শীষের জয় সুনিশ্চিত: ডাঃ এ জেড এম জাহিদ টঙ্গি ইজতেমা হামলার প্রতিবাদে হিলিতে সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ৩১দফা অবহিতকরণে আত্রাইয়ে সাহাগোলা ইউনিয়ন বিএনপি’র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত চারঘাটে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি ইসরাইল, সম্পাদক সুজন

নানা কারণে শেরপুরের সাত সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের নিজস্ব ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে

শেখ সাইদ আহমেদ সাবাব - শেরপুর :
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৩:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ৬৯ বার পঠিত

নামা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে শেরপুরের সাত সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের নিজস্ব মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি। গারো, কোচ, হাজং, বানাই, বর্মণ, হদি ও ডালুসহ এদের মাতৃভাষা আজ বিলুপ্তির পথে। এদের মধ্যে গারো ও কোচরা তাদের পরিবারে টিকিয়ে রেখেছে মাতৃভাষা। কিন্তু তাদের ছেলে- মেয়েরা লেখাপড়া করেন বাংলা ভাষায়। নিজস্ব ভাষা রক্ষার্থে দরকার একটি ক্যালচারাল একাডেমি ও পাঠ্য বইয়ের প্রতিটি স্কুলে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিক্ষক।

বেসরকারি সংস্থা আইইডি’র আদিবাসী সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পের পরিসংখ্যানে, বর্তমানে শেরপুর জেলায় গারো ২৬ হাজার, বর্মণ ২২ হাজার, কোচ ৪ হাজার, হাজং ৩ হাজার, হদি ৩ হাজার ৫শ, ডালু ১৫০০, বানাই ১৫০জন বসবাস করছেন। শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তজুড়ে সাতটি সম্প্রদায়ের ৬০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। এরমধ্যে গারো, বর্মণ, কোচ ও হদি সম্প্রদায়ের সংখ্যাই বেশি।

এক সময় সমৃদ্ধ ভাষা ও সংস্কৃতি থাকলেও, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে নিজেদের চর্চা ও পৃষ্ঠপোষকতায় অভাবে ভুলতে বসেছে নিজস্ব মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি। এদের একটি অংশ শিক্ষিত হচ্ছে আধুনিক শিক্ষায়; আর অল্প কিছু স্কুলে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ধরে রাখার চেষ্টা করা হলেও শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিনের। তাই ভাষা ধরে রাখতে প্রতিটি স্কুলে বইয়ের পাশাপাশি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিক্ষক নিয়োগ ও একটি ক্যালচারাল একাডেমি স্থাপনের দাবি তাদের।

স্থানীয় ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর ক্লোডিয়া নকরেক কেয়া বলেন, আমরা একসময় আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলতাম। কিন্তু এখন বাংলাভাষায় কথা বলি। আমাদের আগের ঐতিহ্যগুলা আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। স্কুল, কলেজে আমাদের ভাষার কোন চর্চায় নাই। আমরা শুনেছি স্কুলে আমাদের ভাষার বই দেওয়া হয়েছে কিন্তু শিক্ষক দেওয়া হয়নি। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই আমাদের ভাষার শিক্ষক দেওয়ার জন্য।

শিউলি মারাক বলেন, আমাদের ভাষা বিলুপ্ত হয়ে জাইতাছে। আমরা আমাদের ভাষায় কথা বলতে চাই। এটা নিয়ে সরকারের কাজ করা দরকার।

সুকেশ বলেন, আমরা বর্মন। আমরা বর্মন ভাষায় কথা বলবার পারি না। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি। আমাদের ভাষার বই সরকার চালু করলে আমাদের ভাষাটা টিকে থাকতো।

হিমেল কোচ বলেন, আমরা পরিবারের সদস্যরা কোচ ভাষায় কথা কই। কিন্তু স্কুলে তো আমাদের ভাষায় পড়ার কোন ব্যবস্থা নাই। তাই আমাদের ভাষা আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে।

শেরপুর আইইডি আদিবাসী সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্প (ফেলো)র আদিবাসী নেতা সুমন্ত বর্মণ বলেন, ৬০ হাজারের মত আদিবাসী শেরপুরে আছে। একময় শেরপুর জেলায় সকল আদিবাসীদের নিজস্ব মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি ছিলো। এদের জন্য একটি ক্যালচারাল একাডেমি না থাকার কারণে জেলায় আদিবাসীদদের ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার পথে। তবে ইতিমধ্যে গারো ভাষা পাঠ্য বইয়ে লিপিবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু স্কুলে বইয়ের পাশাপাশি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এতে করে শিক্ষক সংকটের কারণে গারো ভাষার বইটা পড়ানো হচ্ছে না। আমরা দাবি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের সাথে নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।

এদিকে, শিক্ষক সংকটের কথা স্বিকার করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, গারো ভাষার বি থাকলেও কোন শিক্ষক নেই। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি সরকারের উপজাতিদের ভাষা ভিত্তিক শিক্ষক তৈরি প্রচেষ্ঠা আছে। আপাদত আমরা একটু সংকটে আছি।

আর, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় প্রদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান; জেলা প্রশাসক।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম জানান, শেরপুর জেলায় সাত ধরনের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের বসবাস রয়েছে। তাদের জন্য ইতিমধ্যেই সাংস্কৃতিক একাডেমি স্থাপনের জন্য সংস্কৃতিক মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। এবং তাদের ভাষা সংরক্ষণের জন্য আমরা আমাদের যে জাতীয় গণ গন্থাগার আছে সেটির মাধ্যমে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। তাদের যে নিজস্ব ভাষা আছে সেটি যাতে সংরক্ষণ করা যায়।

ট্যাগস :

নানা কারণে শেরপুরের সাত সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের নিজস্ব ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে

আপডেট সময় : ০৬:৩৩:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

নামা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে শেরপুরের সাত সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের নিজস্ব মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি। গারো, কোচ, হাজং, বানাই, বর্মণ, হদি ও ডালুসহ এদের মাতৃভাষা আজ বিলুপ্তির পথে। এদের মধ্যে গারো ও কোচরা তাদের পরিবারে টিকিয়ে রেখেছে মাতৃভাষা। কিন্তু তাদের ছেলে- মেয়েরা লেখাপড়া করেন বাংলা ভাষায়। নিজস্ব ভাষা রক্ষার্থে দরকার একটি ক্যালচারাল একাডেমি ও পাঠ্য বইয়ের প্রতিটি স্কুলে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিক্ষক।

বেসরকারি সংস্থা আইইডি’র আদিবাসী সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পের পরিসংখ্যানে, বর্তমানে শেরপুর জেলায় গারো ২৬ হাজার, বর্মণ ২২ হাজার, কোচ ৪ হাজার, হাজং ৩ হাজার, হদি ৩ হাজার ৫শ, ডালু ১৫০০, বানাই ১৫০জন বসবাস করছেন। শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তজুড়ে সাতটি সম্প্রদায়ের ৬০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। এরমধ্যে গারো, বর্মণ, কোচ ও হদি সম্প্রদায়ের সংখ্যাই বেশি।

এক সময় সমৃদ্ধ ভাষা ও সংস্কৃতি থাকলেও, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে নিজেদের চর্চা ও পৃষ্ঠপোষকতায় অভাবে ভুলতে বসেছে নিজস্ব মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি। এদের একটি অংশ শিক্ষিত হচ্ছে আধুনিক শিক্ষায়; আর অল্প কিছু স্কুলে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ধরে রাখার চেষ্টা করা হলেও শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিনের। তাই ভাষা ধরে রাখতে প্রতিটি স্কুলে বইয়ের পাশাপাশি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিক্ষক নিয়োগ ও একটি ক্যালচারাল একাডেমি স্থাপনের দাবি তাদের।

স্থানীয় ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর ক্লোডিয়া নকরেক কেয়া বলেন, আমরা একসময় আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলতাম। কিন্তু এখন বাংলাভাষায় কথা বলি। আমাদের আগের ঐতিহ্যগুলা আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। স্কুল, কলেজে আমাদের ভাষার কোন চর্চায় নাই। আমরা শুনেছি স্কুলে আমাদের ভাষার বই দেওয়া হয়েছে কিন্তু শিক্ষক দেওয়া হয়নি। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই আমাদের ভাষার শিক্ষক দেওয়ার জন্য।

শিউলি মারাক বলেন, আমাদের ভাষা বিলুপ্ত হয়ে জাইতাছে। আমরা আমাদের ভাষায় কথা বলতে চাই। এটা নিয়ে সরকারের কাজ করা দরকার।

সুকেশ বলেন, আমরা বর্মন। আমরা বর্মন ভাষায় কথা বলবার পারি না। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি। আমাদের ভাষার বই সরকার চালু করলে আমাদের ভাষাটা টিকে থাকতো।

হিমেল কোচ বলেন, আমরা পরিবারের সদস্যরা কোচ ভাষায় কথা কই। কিন্তু স্কুলে তো আমাদের ভাষায় পড়ার কোন ব্যবস্থা নাই। তাই আমাদের ভাষা আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে।

শেরপুর আইইডি আদিবাসী সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্প (ফেলো)র আদিবাসী নেতা সুমন্ত বর্মণ বলেন, ৬০ হাজারের মত আদিবাসী শেরপুরে আছে। একময় শেরপুর জেলায় সকল আদিবাসীদের নিজস্ব মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি ছিলো। এদের জন্য একটি ক্যালচারাল একাডেমি না থাকার কারণে জেলায় আদিবাসীদদের ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার পথে। তবে ইতিমধ্যে গারো ভাষা পাঠ্য বইয়ে লিপিবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু স্কুলে বইয়ের পাশাপাশি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এতে করে শিক্ষক সংকটের কারণে গারো ভাষার বইটা পড়ানো হচ্ছে না। আমরা দাবি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের সাথে নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।

এদিকে, শিক্ষক সংকটের কথা স্বিকার করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, গারো ভাষার বি থাকলেও কোন শিক্ষক নেই। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি সরকারের উপজাতিদের ভাষা ভিত্তিক শিক্ষক তৈরি প্রচেষ্ঠা আছে। আপাদত আমরা একটু সংকটে আছি।

আর, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় প্রদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান; জেলা প্রশাসক।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম জানান, শেরপুর জেলায় সাত ধরনের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের বসবাস রয়েছে। তাদের জন্য ইতিমধ্যেই সাংস্কৃতিক একাডেমি স্থাপনের জন্য সংস্কৃতিক মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। এবং তাদের ভাষা সংরক্ষণের জন্য আমরা আমাদের যে জাতীয় গণ গন্থাগার আছে সেটির মাধ্যমে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। তাদের যে নিজস্ব ভাষা আছে সেটি যাতে সংরক্ষণ করা যায়।