ঢাকার ধামরাইয়ে চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস মমতাজ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনপূর্বক হত্যার মূলহোতা ও পরিকল্পনাকারী শরীফ প্রধান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ধামরাই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ওয়াহিদ পারভেজ এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে, বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
গ্রেপ্তার শরীফ প্রধান (৩৭) কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানাধীন কাচারীকান্দি পাঁচকিত্তা গ্রামের ছলিমুল্লাহ'র ছেলে। তিনি পেশায় একজন গামেন্টস কর্মকর্তা ও বিবাহিত। গত ২০ বছর ধরে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন।
ভিকটিম মমতাজ বেগম (৩৩) কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানাধীন রঘুনাথপুর গ্রামের হারেজ মিয়ার ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয় মেয়ে। তিনি আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন৷
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ধামরাই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ওয়াহিদ পারভেজ জানান, আসামি শরীফ সম্পর্কে ভিকটিম মমতাজের বোনের দেবর অর্থাৎ ভিকটিম ও আসামি সম্পর্কে বেয়াই-বেয়াইন।
ভিকটিম মমতাজ তালাকপ্রাপ্ত ও তার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ভিকটিমের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় এবং তাদের গ্রামের বাড়ি একই এলাকায় হওয়ার সুবাদে ঘটনার এক মাস আগে মমতাজকে আশুলিয়ায় এনে গামেন্টসে চাকরি দিয়ে দেন শরীফ।
একপর্যায়ে সে ভিকটিমের সাথে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। আসামি শরীফ ভিকটিমের নিকট হতে দুই লাখ টাকা ধারও নেন। ভিকটিম টাকা ফেরত দেয়াসহ বিয়ের জন্য শরীফকে চাপ দেয়। এতে আসামি শরীফ ক্ষিপ্ত হয়ে মমতাজকে হত্যার পরিকল্পনা শুরু করেন।
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আরও জানান, আসামি শরীফ তার পরিকল্পনামতে ভিকটিম মমতাজের ভাড়া বাসা পরিবর্তন করে নতুন স্থানে বাসা ভাড়া করে দেন।
এর পরে শরীফ মমতাজকে হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরাপদ একটি জায়গা খুঁজতে থাকেন। ঘটনার আগের দিন ৭ জানুয়ারি শরীফ ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের কেলিয়া এলাকার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উত্তর পাশের ঘটনাস্থল ভুট্টাক্ষেত পরিদর্শন করতে যান। পর দিন ৮ জানুয়ারি বিকেলবেলা মমতাজকে বেড়ানোর কথা বলে ধামরাই এলাকায় নিয়ে যান।
পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক তারা ঘুরতে ঘুরতে ঘটনাস্থল ভুট্টাক্ষেতের দিকে যান এবং সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার সঙ্গে থাকা নাইলনের রশি দিয়ে প্রথমে ভিকটিমের গলায় পেঁচিয়ে ধরেন।
ভিকটিম যেন চেঁচামেচি করতে না পারে, সেজন্য ভিকটিমের পরিহিত ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যান। পরে স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে ধামরাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিম মমতাজের মরদেহ উদ্ধার করেন এবং একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১৩)।
এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারী তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর কালশী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামি শরীফ প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ওয়াহিদ পারভেজ আসামি শরীফকে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করলে তিনি সেচ্ছায় নিজের দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
জবানবন্দি শেষে বিচারক তাকে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।