ঢাকা ০৮:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
লক্ষ্মীপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট সংস্কার সাতক্ষীরা উপকূলে বিশ্ব জলবায়ু ধর্মঘট কর্মসূচী পালিত বালিয়াকান্দিতে এ্যাসেডের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচী পালিত ভোলা প্রেসক্লাবে গনমাধ্যম কর্মীদের সাথে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মত বিনিময়  আত্রাইয়ে মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ নাগেশ্বরী উপজেলা বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের কমিটি গঠন পত্রিকার প্রকাশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠের প্রকাশকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান পাইকগাছায় দু’পক্ষের বিরোধ ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের ৩জন গুরুতর জখম রাজবাড়ীতে শিক্ষকদের লাঞ্চিতের প্রতিবাদে মানববন্ধন

দেশের জাতীয় ফুল এখন বিলুপ্তির পথে

আল-হুদা মালী- শ্যামনগর:
  • আপডেট সময় : ১১:০৩:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ নভেম্বর ২০২৩ ৮৬ বার পঠিত

শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় খাল-বিলে লাল কিংবা সাদা শাপলা ফুল দেখে মুগ্ধ হন না, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে জাতীয় ফুল শাপলা।

সোমবার ২০ নভেম্বর সকালে শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৪ থেকে ৫টি বিলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগের মতোন খাল-বিলে আর জাতীয় শাপলা ফুল দেখা যায় না। গ্রামের শিশু কিশোরা মাঠ ও বিল-ঝিল থেকে সংগ্রহ করতো শাপলা ফুল। আর বাড়িতে এসে সেই শাপলা গলায় মালা হিসেবে ব্যবহার করতো তারা।

গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরা গ্রামের আলহাজ্ব মুনছুর মালী (৬৫) জানান, শাপলা ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এই ফুল এক সময় গ্রামবাংলার খালে, বিলে, ঝিলে, পুকুরের পানিতে, নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মাত শাপলা-শালুক ও ড্যাপ নামের পরিচিত ফুল। নিজেদের সৌন্দর্য মেলে ধরে ফুটে থাকত এ ফুল। কালের বিবর্তনে আর উপযুক্ত পরিচর্যার অভাবে গাবুরায় ফুলটি আজ নিজের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে জাতীয় ফুল শাপলা।

শ্যামনগর উপজেলার বৃদ্ধ শামছুর সরদার (৮০) বলেন, একসময় এই জনপদে বর্ষা মৌসুমে শুরুতে সকালে বিভিন্ন স্থানে শাপলার বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। এসব দৃশ্য চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না। অনেকে আবার শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে সবজি হিসেবে ব্যবহার করতেন। কালের বিবর্তনে ক্রমে ক্রমে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে। জাতীয় ফুল হিসেবে ফুলটিকে সংরক্ষণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

গাবুরা ইউনিয়নের কৃষক শেখ আব্দুল আজিজ বলেন, ফসলি জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার,বিল থেকে শাপলা ফুল তুলে এনে বাজারে বিক্রি,মৎস্য ঘের করার ফলে,অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ,খাল দখল ও সংস্কারের অভাবে বর্ষাকালে অঞ্চলে এখন আর তেমন পানি হয় না বলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জাতীয় ফুল শাপলা। ফুলটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত নূর রাব্বি মুঠো ফোনে জানান, শাপলা ফুল কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। যার মধ্যে সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলাটি এক সময় গ্রামবাংলায় অনেকেই সবজি হিসেবে ব্যবহার করতেন। শাপলা একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি Nymphaeaceae পরিবারের এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। শাপলার বৈজ্ঞানিক নাম- Nymphaea. পৃথিবীতে শাপলা ফুলের প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি প্রজাতি আছে। এদের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয়। বাংলা ভাষায় এদের শাপলা, শালুক বলা হয়। ইংরেজিতে বলা হয় Water Lily, শাপলা একসময় অত্যন্ত সুলভ ছিল। এই কারণে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসেবে সাদা শাপলা ফুলের (বৈজ্ঞানিক নাম: Nymphaea pubescens) প্রজাতি বেছে নেওয়া হয়। এই ফুল সাধারণত ভারত উপমহাদেশে দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও এই ফুল থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান ইত্যাদি দেশের পুকুর ও হ্রদেও এই ফুল প্রচুর দেখা যায়। শ্রীলংকার জাতীয় ফুলও নীল শাপলা। হাওর-বিল ও দীঘিতে এটি বেশি ফোটে। শাপলা ফুল রাতে পূর্ণাঙ্গভাবে ফোটে। এরা দিনের বেলায় কিছুটা সঙ্কুচিত হয়। শাপলা আসলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া এক ধরনের ফুল যার কোনো রকম পরিচর্যা ছাড়াই সাধারণত আবদ্ধ অগভীর জলাশয়, খাল-বিলে জন্মে থাকে। বাংলাদেশে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন, লবণাক্ততা ও মিষ্টি পানির অভীর জলাধারের অভাবে মূলত শাপলা ফুল বিলুপ্তির পথে। এছাড়া বিল ও কৃষি জমিতে অতিরিক্ত মাত্রায় রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহারের ফলে শাপলা ফুল তার প্রজনন ক্ষমতা হারাচ্ছে আর এসব কারণে আমাদের দেশের দক্ষিণাঞ্চলে শাপলা ফুল প্রায় বিপন্ন প্রজাতিতে পরিণত হতে চলেছে। আজ তা বিলুপ্তির পথে।

শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকতা নাজমুল হুদা জানান, জলবায়ু ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বর্ষা শেষ না হতেই খাল-বিল ও জলাশয় গুলো শুকিয়ে যাওয়া এবং লবণাক্ততা বেশি হওয়ার ফলে এলাকায় শাপলা জন্মানোর ক্ষেত্র বিনষ্ট হচ্ছে। এছাড়া আবাদি জমিতে অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে অনেক শাপলা বীজ বা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা মা-শালুক বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে নতুন করে শাপলার গাছ জন্মাচ্ছে না। ফলে দিনে দিনে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলার বিলুপ্তি ঘটছে।

দেশের জাতীয় ফুল এখন বিলুপ্তির পথে

আপডেট সময় : ১১:০৩:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ নভেম্বর ২০২৩

শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় খাল-বিলে লাল কিংবা সাদা শাপলা ফুল দেখে মুগ্ধ হন না, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে জাতীয় ফুল শাপলা।

সোমবার ২০ নভেম্বর সকালে শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৪ থেকে ৫টি বিলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগের মতোন খাল-বিলে আর জাতীয় শাপলা ফুল দেখা যায় না। গ্রামের শিশু কিশোরা মাঠ ও বিল-ঝিল থেকে সংগ্রহ করতো শাপলা ফুল। আর বাড়িতে এসে সেই শাপলা গলায় মালা হিসেবে ব্যবহার করতো তারা।

গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরা গ্রামের আলহাজ্ব মুনছুর মালী (৬৫) জানান, শাপলা ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এই ফুল এক সময় গ্রামবাংলার খালে, বিলে, ঝিলে, পুকুরের পানিতে, নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মাত শাপলা-শালুক ও ড্যাপ নামের পরিচিত ফুল। নিজেদের সৌন্দর্য মেলে ধরে ফুটে থাকত এ ফুল। কালের বিবর্তনে আর উপযুক্ত পরিচর্যার অভাবে গাবুরায় ফুলটি আজ নিজের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে জাতীয় ফুল শাপলা।

শ্যামনগর উপজেলার বৃদ্ধ শামছুর সরদার (৮০) বলেন, একসময় এই জনপদে বর্ষা মৌসুমে শুরুতে সকালে বিভিন্ন স্থানে শাপলার বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। এসব দৃশ্য চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না। অনেকে আবার শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে সবজি হিসেবে ব্যবহার করতেন। কালের বিবর্তনে ক্রমে ক্রমে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে। জাতীয় ফুল হিসেবে ফুলটিকে সংরক্ষণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

গাবুরা ইউনিয়নের কৃষক শেখ আব্দুল আজিজ বলেন, ফসলি জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার,বিল থেকে শাপলা ফুল তুলে এনে বাজারে বিক্রি,মৎস্য ঘের করার ফলে,অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ,খাল দখল ও সংস্কারের অভাবে বর্ষাকালে অঞ্চলে এখন আর তেমন পানি হয় না বলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জাতীয় ফুল শাপলা। ফুলটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত নূর রাব্বি মুঠো ফোনে জানান, শাপলা ফুল কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। যার মধ্যে সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলাটি এক সময় গ্রামবাংলায় অনেকেই সবজি হিসেবে ব্যবহার করতেন। শাপলা একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি Nymphaeaceae পরিবারের এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। শাপলার বৈজ্ঞানিক নাম- Nymphaea. পৃথিবীতে শাপলা ফুলের প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি প্রজাতি আছে। এদের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয়। বাংলা ভাষায় এদের শাপলা, শালুক বলা হয়। ইংরেজিতে বলা হয় Water Lily, শাপলা একসময় অত্যন্ত সুলভ ছিল। এই কারণে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসেবে সাদা শাপলা ফুলের (বৈজ্ঞানিক নাম: Nymphaea pubescens) প্রজাতি বেছে নেওয়া হয়। এই ফুল সাধারণত ভারত উপমহাদেশে দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও এই ফুল থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান ইত্যাদি দেশের পুকুর ও হ্রদেও এই ফুল প্রচুর দেখা যায়। শ্রীলংকার জাতীয় ফুলও নীল শাপলা। হাওর-বিল ও দীঘিতে এটি বেশি ফোটে। শাপলা ফুল রাতে পূর্ণাঙ্গভাবে ফোটে। এরা দিনের বেলায় কিছুটা সঙ্কুচিত হয়। শাপলা আসলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া এক ধরনের ফুল যার কোনো রকম পরিচর্যা ছাড়াই সাধারণত আবদ্ধ অগভীর জলাশয়, খাল-বিলে জন্মে থাকে। বাংলাদেশে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন, লবণাক্ততা ও মিষ্টি পানির অভীর জলাধারের অভাবে মূলত শাপলা ফুল বিলুপ্তির পথে। এছাড়া বিল ও কৃষি জমিতে অতিরিক্ত মাত্রায় রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহারের ফলে শাপলা ফুল তার প্রজনন ক্ষমতা হারাচ্ছে আর এসব কারণে আমাদের দেশের দক্ষিণাঞ্চলে শাপলা ফুল প্রায় বিপন্ন প্রজাতিতে পরিণত হতে চলেছে। আজ তা বিলুপ্তির পথে।

শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকতা নাজমুল হুদা জানান, জলবায়ু ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বর্ষা শেষ না হতেই খাল-বিল ও জলাশয় গুলো শুকিয়ে যাওয়া এবং লবণাক্ততা বেশি হওয়ার ফলে এলাকায় শাপলা জন্মানোর ক্ষেত্র বিনষ্ট হচ্ছে। এছাড়া আবাদি জমিতে অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে অনেক শাপলা বীজ বা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা মা-শালুক বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে নতুন করে শাপলার গাছ জন্মাচ্ছে না। ফলে দিনে দিনে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলার বিলুপ্তি ঘটছে।