দীর্ঘ তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার পর উন্মুক্ত হবে সুন্দরবন
- আপডেট সময় : ০৭:২০:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৩ ৩০০ বার পঠিত
মোঃ শাহাদাত হোসাইন,শরণখোলা,(বাগেরহাট):
প্রজনন মৌসুমে বন্যপ্রাণী ও মৎস্য সম্পদের প্রজনন বাড়াতে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট সুন্দরবনে সব ধরণের মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ। টানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর ১ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন।
তিনমাস বন্ধ থাকার পর পর্যটক ও জেলেদের জন্য খুলছে সুন্দরবনের দ্বার। আর বনের উপর নির্ভরশীল জেলেরাও যাবে তাদের জীবিকার অন্বেষনে। ইতোমধ্যে জেলে, ট্যুর অপারেটর, লঞ্চ ও বোট চালকরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন সুন্দরবনের প্রবেশের জন্য।
বন বিভাগের পক্ষ থেকে সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলোকে ভ্রমণ উপযোগী করে তোলা হয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য ট্যুর অপারেটরগুলো তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ঢল নামবে বলে বন বিভাগ ও ট্যুর অপারেটরদের প্রত্যাশা।
বন বিভাগ বলছে, প্রজনন মৌসুমে ৩ মাস সুন্দরবনে সব ধরণের মানুষের প্রবেশ বন্ধ থাকায় বন্যপ্রাণীরা নির্বিঘ্নে প্রজনন করতে পেরেছে। বনে বিভিন্ন ধরণের বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে বনের নদী, খালে মাছও বৃদ্ধি পেয়েছে। লোকালয়ের কাছাকাছি এবং বন বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরের পাশে হরিণ, বানর, বন্য শুকুর, সাপ, অজগর, ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর প্রায়ই দেখা মিলছে। এমনকি বনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের ডাকও শোনা গেছে।
সুন্দরবন বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। ১৮৭৮ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সুন্দরবনের মোট আয়াতন ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে স্থলভাগের পরিমাণ চার হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার এবং জলভাগের পরিমাণ এক হাজার ৮৭৩ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবন জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ বিশ্বের মধ্যে সমৃদ্ধশালী একটি ইকোসিস্টেম। অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল সুন্দরবন। রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরও আবাসস্থল সুন্দরবন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন।
জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে সুন্দরবনের এক লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৯ দশমিক ৪৯৬ হেক্টর এলাকা অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। তখন যা ছিল সুন্দরবনের মোট আয়াতনের শতকরা ২৩ ভাগ অভয়ারণ্য। এর ২১ বছর পর ২০১৭ সালে সরকার সুন্দরবনে অভয়ারণ্য এলাকা সম্প্রসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে নতুন করে বনের আরও এক লাখ ৭৮ হাজার ২৫০ দশমিক ৫৮৪ হেক্টর এলাকা অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সব মিলে বর্তমানে সুন্দরবনের মোট তিন লাখ ১৭ হাজার ৯৫০ দশমিক ০৮ হেক্টর এলাকা অভয়ারণ্য। সেই হিসেবে এখন সুন্দরবনের মোট আয়াতনের শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি অভয়ারণ্য এলাকা।
বন বিভাগের তথ্য মতে, গোটা সুন্দরবনের অপরূপ দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এর মধ্যে বিশেষ করে সুন্দরবনের করমজল, হারবারিয়া, কলাগাছিয়া, কটকা, কচিখালী, দোবেকী এবং হিরণ পয়েন্ট এলাকা পর্যটকরা ভ্রমণ করে থাকেন। করমজল, হারবারিয়া এবং কলাগাছিয়া এই তিন স্থানে পর্যটকরা ভ্রমণে গিয়ে দিনের মধ্যেই ফিরে আসেন। এ কারণে ওই তিনটি স্থানে প্রবেশ করার পর পর্যটকরা প্রবেশ ফি দিয়ে থাকেন। অপর চারটি স্থানে ভ্রমণ করতে হলে আগে থেকে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে পর্যটকদের সুন্দরবনে আসতে হয়।
সুন্দরবনে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড, ৩৭৫ প্রজাতির অধিক বন্যপ্রাণী এবং সর্বশেষ জরিপ অনুসারে সুন্দরবনে ১১৪টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। সুন্দরবনে ৪৫০টি ছোট-বড় নদী, খাল জালের মতো জড়িয়ে রয়েছে।এখন বনের বিভিন্ন এলাকায় হরিণ, বানর, গুইসাপ অজগরসহ বিভিন্ন ধরণের বন্যপ্রাণী ঘোরাফেরা করতে তারা দেখেছে। তিন মাস বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার থেকে সুন্দরবনে ভ্রমণে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে তারা সব ধরণের প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে।
সুন্দরবনের মৎস্য ব্যবসায়ী কবির হোসেন, ডালিম হাওলাদার, রুবেল খলিফা,তুহিন বয়াতী বলেন, বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জেলে ও মৎস্যজীবীরা তিনমাস খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়েছে। তাই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার সাথে সাথে বন বিভাগ থেকে পারমিট নিয়ে তারা জীবিকার অন্বেষনে ছুটে যাবেন সুন্দরবনে। এখন তাদের শুধু অপেক্ষার পালা। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় আগের মতো দুই মাস করার দাবী তাদের। তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার পর উন্মুক্ত হবে সুন্দরবন।