টাকার জন্য প্রবেশপত্র না পাওয়ায় এসএসসি পরীক্ষায় বসতে পারেনি শামীম
- আপডেট সময় : ০৪:১৯:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মে ২০২৩ ৩১২ বার পঠিত
সারাদেশে শুরু হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা।বন্ধুরা সবাই এসএসসি পরীক্ষায় বসেছে, অন্যদিকে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঘাগড়া দক্ষিণপাড়া ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হকের কারণে পরীক্ষায় বসতে পারেনি মোঃ শামীম।
পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি ছিল তার। কিন্তু আগের ১ হাজার টাকা বকেয়া থাকায় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি তাকে।
ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের স্কুল শিক্ষার্থী মোঃ শামীম । সে উপজেলার জুলগাও গ্রামের কৃষক মৃত আব্বাস আলীর ছেলে।
অভিযোগ উঠেছে, ঘাগড়া দক্ষিণপাড়া ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক শিক্ষার্থী শামীমের কাছে ফরম ফিলাপের বকেয়া টাকা দাবী করে প্রবেশপত্র দেয়নি। এতে এবছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে শামীমের। স্কুলের সকল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপের জন্য তিন হাজার টাকা করে নেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক। আর সকলেরই ফরম ফিলাপের টাকা দিলেও শিক্ষার্থী শামীম দুই হাজার টাকা দেয়। পরে আরও এক হাজার টাকা দিতে না চাইলেও প্রধান শিক্ষক ঐ এক হাজার টাকা ছাড়তে না চাওয়ায় পরে দিতে চান শামীম। সকল পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দিয়ে দিলেও শামীমের প্রবেশপত্র দেয়নি প্রধান শিক্ষক। পরীক্ষার যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছিলো শামীম। কয়েকবার প্রধান শিক্ষকের কাছে স্কুলে গিয়ে প্রবেশপত্র চাইলে তাকে বলা হয় বকেয়া টাকা নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে থাকতে। কিন্তু কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে শেষ পর্যন্ত তার প্রবেশপত্র হাতে না পাওয়ায় পরীক্ষায় বসতে পারে নি। যখন দেখে সকলে পরীক্ষা দিতে বসে গেছে তখন সে তার শিক্ষকের জন্য কয়েকটি কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে খুঁজে পায়। আর শিক্ষকের কাছে প্রবেশপত্র চাইলে প্রধান শিক্ষক বলে সন্ধায় প্রবেশপত্র নিতে।
এমন ঘটনায় শুধু হতবাক নয় রীতিমতো ক্ষুব্ধ ছেলেটির পরিবার, প্রতিবেশি ও এলাকাবাসাী।
পরীক্ষার্থী শামীম মিয়া বলে, স্যার ফরম ফিলাপের তিন হাজার টাকা চাইছিলো।আমার বাবা নাই তাই ১ হাজার টাকা ফরম ফিলাপের সময় কম দিছিলাম। কিন্তু স্যার কম নিতে রাজি না হয় নি। তাই টাকা পরে দিতে চাই। পরে এডমিট কার্ড নিতে গেছি ঐদিন বলছে টাকা আনসস পরে বলছি না স্যার। আমারে স্যার পরে বললো তুই পরীক্ষা দিবার যাইস তখন দিমুনি। পরীক্ষা দিতে যাইয়া দেখি কোন স্যার আসে নাই। পরে সওদাগর ভাইরে নিয়ে কয়েকটা কেন্দ্র ঘুরে স্যারকে পেলাম। তখন স্যার বললো রাতে নিস। আমি বললাম রাতে নিয়া কি করমু। পরে স্যার কিছু না বলে চলে গেলো।
আমার পরীক্ষা দিবার খুব ইচ্ছে ছিলো। স্যারের জন্য আমার ইচ্ছে পুরন হয়নি। বাবা নাই লেখাপড়া করে চাকরি করার ইচ্ছা ছিলো। তা পুরণ হলো না। এক বছরের জন্য পিছিয়ে গেলাম।
মা শিরিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে। আমি অনেক কষ্ট করে ভাইয়ের বাড়িতে থেকে পোলাডারে পড়াইতাছিলাম। কিন্তু স্যার আমার পোলাডার সর্বনাশ করে দিছে। ১ হাজার টাকার জন্য আমার পোলারে এডমিট দেয় নাই। এর জন্য পোলা আমার পরীক্ষায় দিতে পারলো না। ওর জীবনডাই শেষ। একবছরের জন্য পিছায় গেলো। এই ক্ষতি কে পোষাবো আমাদের। আমি সরকারের ঐ শিক্ষকের বিচার চাই।
শামীমের মামা আজাদ মিয়া বলেন, আমার বাগিনা শামীমের বাবা নেই। তারা আমার ওখানে থাকে। তার কি অপরাধ ছিলো যে পরীক্ষা দিতে পারলো না। ১ হাজার টাকার জন্য আমার বাগিনার এডমিট কার্ড দেওয়া হয় নাই। এতিম ছেলেদের তো মানুষ এমনিতেই সাহায্য করে। সে পরীক্ষা না দিতে পারায় তার ভবিষ্যতটা অন্ধকার হয়ে গেলো। আমি সরকারের কাছে প্রধান শিক্ষক নুরুল হকের সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ অভিযোগ পাওয়ার পর মুঠোফোনে বারবার ওই স্কলের প্রধান শিক্ষক নুরুল হকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। এক পর্যায়ে তার ভাইকে দিয়ে তার ব্যবহত মোবাইল ধরায়। আর তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায় নি।
মালিঝিকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, শামীম নামের ছেলেটার ফরম ফিলাপ বা এডমিট না পাওয়ার বিষয়টা আমাকে কেউ জানায় নাই। আমি বিষয়টা জানলে আমার পরিষদ বা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করতাম। আমি ঘটনাটি শুনার সাথে সাথে ছেলের বাসায় এসে কথা বলে গেলাম। এই ঘটনাটি যদি প্রধান শিক্ষক করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রসাশনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জোর দাবী জানাই।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ জানান, আমাকে এ বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানোর পরে তাদেরকে উপজেলায় আসতে বলা হয়েছে। আর একটি অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এখনো তারা কোন অভিযোগ দেয় নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।