ফরিদপুরের সালথায় একটি সরকারি কালেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ওই কিশোরীর বাবা ও চাচাকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির রায়মোহন কুমার রায়কে (২৮) আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
শনিবার (১০ মার্চ) সকালে ওই কিশোরীর মা পলি রানী পাল বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।
এ মামলার আসামি হিসেবে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রায়মোহন রায় ছাড়াও আরও চার সহযোগীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞানামা আসামি করা হয়েছে আরও পাঁচ-ছয়জনকে।
এ মামলায় ছাত্রলীগের সভাপতির যে চার সহযোগীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- বিজয় সরকার (২৫), মিঠু সরকার (২৫), শামিম শেখ (২৪) ও সুব্রত সরকার (২৫)। উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রায় মোহন কুমার রায়সহ এরা সকলে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের সাড়ুকদিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, তার মেয়েকে বিভিন্ন সময় পথেঘাটে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিসহ কুপ্রস্তাব দিত রায়মোহন। তার মেয়ে এ বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানালে রায়মোহন ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ও তাদের পরিবারকে ক্ষতি করবে বলে হুমকি দিতে থাকে।
এজাহারে ওই কিশোরী মা উল্লেখ করেন, শুক্রবার (১০ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে তার মেয়েকে বাড়ির পাশে পেয়ে রায়মোহন প্রেমের প্রস্তাব দিলে সে তা অস্বীকার করে। তখন রায়মোহন মেয়ের হাত ধরে টানা হেঁচড়া করতে থাকে। মেয়ের চিৎকারে আমরা এগিয়ে এলে রায় মোহন তার সহযোগীদের নিয়ে রামদা, ছেনদা, হাতুরি, বাঁশের লাঠি, লোহর রডসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রসহ আমার স্বামীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করিতে থাকে। তখন রায়মোহন ও তার সহযোগিরা আমার স্বামীসহ ভাশুড় ও ভাতিজাকে এলোপাথারি ভাবে বাঁশের লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারপিট করে আহত করে। পরে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়।
এজাহারে আরও বলা হয়, আমার স্বামী ও ভাশুরকে সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রথমিক চিকিৎসা করাই। আমার ভাশুরের অবস্থা খারাপ দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থনান্তর করেন।
সালথা থানা সুত্রে জানা গেছে, যৌন পীড়নসহ বে-আইনী জনতাবদ্ধে গতিরোধ করে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে সাধারণ ও গুরুতর জখমসহ হুমকি ও হুকুম দেওয়ার অভিযোগে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় এ মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল জানান, আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, শনিবার দুপুরে আদালত ওই কিশোরী জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন।
এব্যাপারে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ান বলেন, এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতিকে আহŸায়ক এবং এক যুগ্ম-সম্পাদক ও এক সাংগঠনিক সম্পাদক নিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হবে। প্রতিবেদনের আলোকে সালথা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রায়মোহন কুমার রায়ের বিরুদ্ধে পরবর্তী সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনা নিয়ে এর আগে "ছাত্রলীগ সভাপতির নামে কিশোরীর বাবা-চাচাকে পিটিয়ে আহতের অভিযোগ" শিরোনামে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। এর পরপরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।