ঢাকা ০৪:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পত্রিকার প্রকাশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠের প্রকাশকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান পাইকগাছায় দু’পক্ষের বিরোধ ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের ৩জন গুরুতর জখম রাজবাড়ীতে শিক্ষকদের লাঞ্চিতের প্রতিবাদে মানববন্ধন গোয়ালন্দ পাক দরবার শরিফ নিয়ে গুজব ছড়ানো সংবাদের প্রতিবাদ প্রথমবারের মতো সেনাসদর পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংসদ থেকে যত টাকা খোয়া গেছে আশুলিয়ায় ধর্ষকের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে ভুক্তভোগী নারীর সংবাদ সম্মেলন দৌলতদিয়া- পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ৭ জেলে নিখোঁজ 

গর্ভাবস্থায় নারীদের রোজা রাখা যাবে কি?

প্রতিদিনের খবর ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় : ১১:১৮:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০২৪ ৩২৭ বার পঠিত

লিখেছেন: ডা: শাহনাজ পারভীন জেবা

সহকারী অধ্যাপক,গাইনী এন্ড অবস্ বিভাগ
সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল,কুমিল্লা

গর্ভাবস্থায় নারীর বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিবর্তন হয়। তার খাবার ও বিশ্রামের ওপর নির্ভর করে গর্বস্থ শিশুর বৃদ্ধি ও পুষ্টি। এ সময়ে একজন নারীর খাবারের চাহিদা থাকে গর্ভাবস্থার আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। গর্ভাবস্থায় নারীকে প্রচুর খেতে হয়। পবিত্র রমজান মাসে যেহেতু দীর্ঘ সময় পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়, তাই এ সময়ে অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা রোজা রাখা না রাখা নিয়ে বেশ দ্বিধায় থাকেন। একদিকে রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ, অপরদিকে সারা দিন অভুক্ত থাকলে শিশু সঠিক পুষ্টি পাবে কি না, সে ব্যাপারে অনিশ্চয়তা! যদিও ইসলামি নিয়মানুসারে গর্ভবতী মায়ের রোজা রাখার ওপর শিথিলতার কথা উল্লেখ আছে। হবু মায়ের রোজা রাখা অনেকাংশেই নির্ভর করে তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর। গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশু উভয়ই যদি সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে, তবে মায়ের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই।

গর্ভকালীন সময়কে যদি তিন ভাগে ভাগ করা হয়, তবে প্রথম তিন মাস বেশ জটিল। এ সময়ে মাতৃগর্ভে শিশুর প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি হয়। তাই মায়ের শরীরে সঠিক মাত্রায় পুষ্টি, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পানির সরবরাহ জরুরি। তা ছাড়া এ সময়ে বমি, খাদ্যে অরুচি, মাথাব্যথা, ওজন কমে যাওয়াসহ কিছু জটিলতাও দেখা দেয়। তাই প্রথম তিন মাসে রোজা না রাখাই ভালো।

মধ্যবর্তী তিন মাসে গর্ভের শিশুর গঠন তৈরি হয়ে যায়। গর্ভবতী মা এ সময় অপেক্ষাকৃত ভালো বোধ করেন। মা ও শিশুর যদি অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা না থাকে এবং মায়ের ওজন ঠিক থাকে, তাহলে এ তিন মাসে তার রোজা রাখায় কোনো বাধা নেই। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রথম তিন মাসের মতো শেষ তিন মাসও গর্ভবতী মাকে অধিক সতর্ক থাকতে হয়। এ সময়ে গর্ভের শিশুটি দ্রুত বেড়ে ওঠে। তাই এ সময়ে মা ও শিশুর খাওয়াদাওয়ার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। রমজান মাসে যেসব অন্তঃসত্ত্বা নারী রোজা রাখতে চান, তাঁদের অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভবতী নারী যদি রোজা পালন করেন, তবে অবশ্যই নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন।

১.রোজার ক্লান্তি কমাতে বিশ্রামের মাত্রা বাড়িয়ে দিন।
২.দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন।
৩.বেশি হাঁটবেন না এবং অতিরিক্ত পরিশ্রম করবেন না।
৪.ভারী কিছু বহন করবেন না।
৫.সাহ্‌রি, ইফতার ও রাতের খাবারের প্রতি মনোযোগী হোন।
৬.রাত জাগার অভ্যাস পরিহার করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
৭.পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

দীর্ঘ এক মাসের রোজায় যেকোনো সময়ে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে নিচের সমস্যাগুলোর যেকোনোটিতে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

১.গর্ভের সন্তান নড়াচড়া না করলে।
২.তলপেটে ব্যথা অনুভব করলে।
৩.গর্ভের শিশুর ওজন যদি না বাড়ে।
৪.বমি ও মাথাব্যথা হলে।
৫.জ্বরজ্বর ভাব হলে।
৬.ঘনঘন প্রস্রাব¯হলে এবং গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হলে।
৭.পর্যাপ্ত বিশ্রাম করার পরও যদি ঘুম ঘুম ভাব হয় বা দুর্বলতা অনুভব হয়।

একজন শিশুর স্বাস্থ্য, মেধা, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কিংবা জন্মরোগ, এগুলো অনেকাংশেই নির্ভর করে তার মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠার ওপর। একজন অন্তঃসত্ত্বা মা যদি সঠিক পুষ্টি না পান, তবে শিশুর ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ক্যালরির প্রয়োজন হয়, তাই স্বাভাবিক সময়ের থেকে তাকে বেশি পরিমাণে খেতে হয়।

মনে রাখতে হবে, একজন অন্তঃসত্ত্বা মা তাঁর নিজের শরীরে অন্য একটি জীবনকে ধারণ করছেন। তাই সেই জীবনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব মায়ের ওপর থাকে। যেখানে আল্লাহ অন্তঃসত্ত্বা মায়ের জন্য রোজা শিথিল করে দিয়েছেন, তাই তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য গর্ভের শিশুর সামান্যতম ক্ষতি হতে পারে এমন কিছু করা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়।

গর্ভাবস্থায় নারীদের রোজা রাখা যাবে কি?

আপডেট সময় : ১১:১৮:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০২৪

লিখেছেন: ডা: শাহনাজ পারভীন জেবা

সহকারী অধ্যাপক,গাইনী এন্ড অবস্ বিভাগ
সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল,কুমিল্লা

গর্ভাবস্থায় নারীর বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিবর্তন হয়। তার খাবার ও বিশ্রামের ওপর নির্ভর করে গর্বস্থ শিশুর বৃদ্ধি ও পুষ্টি। এ সময়ে একজন নারীর খাবারের চাহিদা থাকে গর্ভাবস্থার আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। গর্ভাবস্থায় নারীকে প্রচুর খেতে হয়। পবিত্র রমজান মাসে যেহেতু দীর্ঘ সময় পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়, তাই এ সময়ে অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা রোজা রাখা না রাখা নিয়ে বেশ দ্বিধায় থাকেন। একদিকে রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ, অপরদিকে সারা দিন অভুক্ত থাকলে শিশু সঠিক পুষ্টি পাবে কি না, সে ব্যাপারে অনিশ্চয়তা! যদিও ইসলামি নিয়মানুসারে গর্ভবতী মায়ের রোজা রাখার ওপর শিথিলতার কথা উল্লেখ আছে। হবু মায়ের রোজা রাখা অনেকাংশেই নির্ভর করে তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর। গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশু উভয়ই যদি সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে, তবে মায়ের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই।

গর্ভকালীন সময়কে যদি তিন ভাগে ভাগ করা হয়, তবে প্রথম তিন মাস বেশ জটিল। এ সময়ে মাতৃগর্ভে শিশুর প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি হয়। তাই মায়ের শরীরে সঠিক মাত্রায় পুষ্টি, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পানির সরবরাহ জরুরি। তা ছাড়া এ সময়ে বমি, খাদ্যে অরুচি, মাথাব্যথা, ওজন কমে যাওয়াসহ কিছু জটিলতাও দেখা দেয়। তাই প্রথম তিন মাসে রোজা না রাখাই ভালো।

মধ্যবর্তী তিন মাসে গর্ভের শিশুর গঠন তৈরি হয়ে যায়। গর্ভবতী মা এ সময় অপেক্ষাকৃত ভালো বোধ করেন। মা ও শিশুর যদি অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা না থাকে এবং মায়ের ওজন ঠিক থাকে, তাহলে এ তিন মাসে তার রোজা রাখায় কোনো বাধা নেই। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রথম তিন মাসের মতো শেষ তিন মাসও গর্ভবতী মাকে অধিক সতর্ক থাকতে হয়। এ সময়ে গর্ভের শিশুটি দ্রুত বেড়ে ওঠে। তাই এ সময়ে মা ও শিশুর খাওয়াদাওয়ার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। রমজান মাসে যেসব অন্তঃসত্ত্বা নারী রোজা রাখতে চান, তাঁদের অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভবতী নারী যদি রোজা পালন করেন, তবে অবশ্যই নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন।

১.রোজার ক্লান্তি কমাতে বিশ্রামের মাত্রা বাড়িয়ে দিন।
২.দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন।
৩.বেশি হাঁটবেন না এবং অতিরিক্ত পরিশ্রম করবেন না।
৪.ভারী কিছু বহন করবেন না।
৫.সাহ্‌রি, ইফতার ও রাতের খাবারের প্রতি মনোযোগী হোন।
৬.রাত জাগার অভ্যাস পরিহার করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
৭.পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

দীর্ঘ এক মাসের রোজায় যেকোনো সময়ে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে নিচের সমস্যাগুলোর যেকোনোটিতে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

১.গর্ভের সন্তান নড়াচড়া না করলে।
২.তলপেটে ব্যথা অনুভব করলে।
৩.গর্ভের শিশুর ওজন যদি না বাড়ে।
৪.বমি ও মাথাব্যথা হলে।
৫.জ্বরজ্বর ভাব হলে।
৬.ঘনঘন প্রস্রাব¯হলে এবং গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হলে।
৭.পর্যাপ্ত বিশ্রাম করার পরও যদি ঘুম ঘুম ভাব হয় বা দুর্বলতা অনুভব হয়।

একজন শিশুর স্বাস্থ্য, মেধা, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কিংবা জন্মরোগ, এগুলো অনেকাংশেই নির্ভর করে তার মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠার ওপর। একজন অন্তঃসত্ত্বা মা যদি সঠিক পুষ্টি না পান, তবে শিশুর ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ক্যালরির প্রয়োজন হয়, তাই স্বাভাবিক সময়ের থেকে তাকে বেশি পরিমাণে খেতে হয়।

মনে রাখতে হবে, একজন অন্তঃসত্ত্বা মা তাঁর নিজের শরীরে অন্য একটি জীবনকে ধারণ করছেন। তাই সেই জীবনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব মায়ের ওপর থাকে। যেখানে আল্লাহ অন্তঃসত্ত্বা মায়ের জন্য রোজা শিথিল করে দিয়েছেন, তাই তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য গর্ভের শিশুর সামান্যতম ক্ষতি হতে পারে এমন কিছু করা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়।