খাগড়াছড়িতে হরতাল- অবরোধে পর্যটনে মন্দাভাব
- আপডেট সময় : ০৫:৪৪:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর ২০২৩ ২১৭ বার পঠিত
অবরোধ ঘোষণার আগে বেড়াতে এসে অনেক পর্যটক আটকা পড়েছেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় মৌসুমের শুরুতেই খাগড়াছড়িতে পর্যটন খাতে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা তিন দিনের অবরোধে দর্শনার্থী শূন্য হয়ে পড়েছে জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীসহ এ খাতের সঙ্গে জড়িতরা। তবে পর্যটন খাতকে হরতাল ও অবরোধের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে হঠাৎ অবরোধের ঘোষণায় খাগড়াছড়িতে ঘুরতে এসে অনেক দর্শনার্থী আটকা পড়েছেন।
মঙ্গলবার বিকালে খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলায় গিয়ে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। কয়েকদিন আগেও পর্যটকে মুখরিত থাকলেও এখন একেবারেই ভিন্নচিত্র। পর্যটন কেন্দ্রের নন্দনপার্ক, সুড়ঙ্গ, ঝুলন্ত সেতু কোথাও নেই দর্শনার্থী।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক চন্দ্র কিরণ ত্রিপুরা বলেন, “এখন শীত মৌসুম শুরু। বছরের এ সময় প্রচুর দর্শনার্থী থাকে। কিন্তু বিএনপির অবরোধ-হরতালের কারণে পর্যটক নেই বললেই চলে।
“প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ পর্যটক এখানে ভ্রমণে আসেন। কিন্তু এখন সারাদিনে ৫০ জনও আসেনি। এভাবে চলতে থাকলে আমার আর্থিক ক্ষতি হবে।”
একই পর্যটন কেন্দ্রের ভেতরে থাকা আলুটিলা কফি হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক মেহেদি হাসান হৃদয় বলেন, “অবরোধের কারণে আমাদের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ক্ষতির মুখে। দর্শনার্থী কম। আশা করব, অবরোধ বন্ধ হবে এবং আমাদের ব্যবসা সচল হবে।”
একই অবস্থা খাগড়াছড়ির অন্য পর্যটন কেন্দ্রেও। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্ক ও রিছাং ঝর্নায় কোনো দর্শনার্থী দেখা যায়নি। অবরোধের কারণে অনেকেই ট্যুর বাতিল করেছেন; এতে আগাম বরাদ্দ হওয়া কক্ষ বাতিল হয়ে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
খাগড়াছড়ির অভিজাত আবাসিক হোটেল গাইরিংয়ের ব্যবস্থাপক প্রান্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, “দুর্গা পূজার পর থেকে আমাদের হোটেলের ৪৩টি কক্ষের অধিকাংশই ভরা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটা গ্রুপ পুরো হোটেলে অবস্থান করছিল।
“অবরোধের খবরে তারা একদিন আগেই হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন। আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কারণ পর্যটক না এলেও হোটেলের নিয়মিত খরচ বহন করতে হচ্ছে।”
এদিকে অবরোধ ঘোষণার আগে খাগড়াছড়িতে বেড়াতে গিয়ে অনেক পর্যটক ভোগান্তিতে পড়েছেন। ঢাকায় ফেরার বাস না পেয়ে সেখানে আটকা পড়েছেন অনেকেই। বন্ধ রয়েছে খাগড়াছড়ির সঙ্গে ঢাকাসহ সারাদেশের বাস চলাচল।
‘রবি এক্সপ্রেসের’ কাউন্টার ম্যানেজার জামশেদ আলম সুমন বলেন, “প্রতিদিন দুইটা করে বাস ঢাকায় যায়। আজকে একটাও ছাড়িনি। অনেক পর্যটক আটকা পড়েছেন। রাতে বাস ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কোম্পানির নির্দেশে যাত্রা বাতিল করে যাত্রীদের টিকেটের টাকা ফেরত দিয়েছি।”
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সোহাগ বলেন, “বন্ধুরা মিলে ২৯ অক্টোবর সাজেকে বেড়াতে এসেছি। এখন ফেরার বাস পাচ্ছি না। দুটো বাসের টিকেট করেছি। পরে কাউন্টার থেকে বলা হলো রাতে গাড়ি ছাড়বে না। এখন বিকল্প উপায়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।”
খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, “ভরা মৌসুমে পর্যটক না থাকায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘ হলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। খাগড়াছড়ি পর্যটননির্ভর জেলা। এখানকার অনেকেই পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ করব তারা যাতে পর্যটন খাতকে রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে রাখে।
পর্যটন মৌসুমে এ জেলায় মাসে অন্তত ১৫ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করে থাকেন বলে জানান তিনি।”