ঢাকা ১২:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পত্রিকার প্রকাশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠের প্রকাশকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান পাইকগাছায় দু’পক্ষের বিরোধ ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের ৩জন গুরুতর জখম রাজবাড়ীতে শিক্ষকদের লাঞ্চিতের প্রতিবাদে মানববন্ধন গোয়ালন্দ পাক দরবার শরিফ নিয়ে গুজব ছড়ানো সংবাদের প্রতিবাদ প্রথমবারের মতো সেনাসদর পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংসদ থেকে যত টাকা খোয়া গেছে আশুলিয়ায় ধর্ষকের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে ভুক্তভোগী নারীর সংবাদ সম্মেলন দৌলতদিয়া- পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ৭ জেলে নিখোঁজ 

কুড়িগ্রামের ৭২ ইউনিয়নের ৫৫টি বন্যা কবলিত, পানিবন্দি দুই লক্ষাধিক মানুষ খাবার সংকটে

শিল্পী আক্তার- রংপুর ব্যুরো:
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৬:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪ ৩৮ বার পঠিত

কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি পাঁচ সেন্টিমিটার কমে কুড়িগ্রামের চিলমারী পয়েন্টে আজ শনিবার সকাল ৬টা থেকে বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুধকুমার নদীর পানি ৪২ সেন্টিমিটার বেড়ে কুড়িগ্রামের পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ও ধরলাসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আজ সকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান।

তিনি জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আপাতত না বাড়লেও দুধকুমার নদীর পানি বাড়ছে দ্রুত গতিতে। আগামী আরও কয়েকদিন বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে। এবছর ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।

জেলা কুড়িগ্রামে ৭২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি ইউনিয়নই বন্যাদুর্গত। দুই লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি। গেল সোমবার থেকে বানের পানির সাথে লড়াই করে বেঁচে আছেন তারা। অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে। অনেক দুর্গত এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন বন্যা দুর্গতরা।

অনেকে অভিযোগ করেছেন সরকারি ত্রাণ সহায়তা অপ্রতুল। এখনো দুর্গম এলাকাগুলোতে সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর মধ্য কদমতলা এলাকার কৃষক শফিকুল ইসলাম (৬০) বলেন, বাড়িতে পানি ওঠায় রান্না করতে পারছেন না। শুকনো খাবার খেয়ে আছেন। মাঝে মাঝে আত্মীয়-স্বজন খাবার পাঠাচ্ছেন। সরকারি অথবা বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা পাননি।

তিনি জানান, তার তিন বিঘা জমির পটল খেত বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে এক সপ্তাহ ধরে।

একই চরের পানিবন্দি দিনমজুর মাইদুল ইসলাম (৪৮) বলেন, ঘরের ভেতর একবুক সমান পানি। তারা বাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে আছেন। তারা গেল কয়েকদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এখনো কোন ত্রাণ সহায়তা পাননি।

বন্যা পরিস্থিতির কারণে জেলার ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। দুই হাজার ৩০০ হেক্টর জমির পটল, মরিচসহ বিভিন্ন সবজি ও আমন ধানের বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল বানের পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পাকা রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কের ধরলারপাড় এলাকায় পাকা সড়কের ওপর দিয়ে নৌকা চলাচল করছে। ৪০৪টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। বন্যার্তরা উঠেছেন ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, সবদিকে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব দুর্গত পরিবারের কাছে সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এবছর বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে। বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করছেন বলে জানান।

এদিকে গতকাল বিকেলে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় কলাগাছের ভেলায় চড়ে যাওয়ার সময় দুই বোনসহ তিন জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন।

নিহতরা হলেন নাগেশ্বরী উপজেলার কালিগঞ্জ ইউনিয়নের বেগুনী পাড়া গ্রামের শাহাদাৎ হোসেনের দুই মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১১), মাছুমা আক্তার (৬) এবং একই উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ব্যাপারী পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান মুন্সির ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৪২)। দুই বোন ভেলায় করে প্রতিবেশী খালার বাড়িতে যাচ্ছিল এবং সিরাজুল ইসলাম ভেলায় চড়ে বাজারে যাচ্ছিলেন শুকনো খাবার কেনার জন্য।

কুড়িগ্রামের ৭২ ইউনিয়নের ৫৫টি বন্যা কবলিত, পানিবন্দি দুই লক্ষাধিক মানুষ খাবার সংকটে

আপডেট সময় : ০৮:৪৬:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪

কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি পাঁচ সেন্টিমিটার কমে কুড়িগ্রামের চিলমারী পয়েন্টে আজ শনিবার সকাল ৬টা থেকে বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুধকুমার নদীর পানি ৪২ সেন্টিমিটার বেড়ে কুড়িগ্রামের পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ও ধরলাসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আজ সকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান।

তিনি জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আপাতত না বাড়লেও দুধকুমার নদীর পানি বাড়ছে দ্রুত গতিতে। আগামী আরও কয়েকদিন বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে। এবছর ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।

জেলা কুড়িগ্রামে ৭২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি ইউনিয়নই বন্যাদুর্গত। দুই লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি। গেল সোমবার থেকে বানের পানির সাথে লড়াই করে বেঁচে আছেন তারা। অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে। অনেক দুর্গত এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন বন্যা দুর্গতরা।

অনেকে অভিযোগ করেছেন সরকারি ত্রাণ সহায়তা অপ্রতুল। এখনো দুর্গম এলাকাগুলোতে সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর মধ্য কদমতলা এলাকার কৃষক শফিকুল ইসলাম (৬০) বলেন, বাড়িতে পানি ওঠায় রান্না করতে পারছেন না। শুকনো খাবার খেয়ে আছেন। মাঝে মাঝে আত্মীয়-স্বজন খাবার পাঠাচ্ছেন। সরকারি অথবা বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা পাননি।

তিনি জানান, তার তিন বিঘা জমির পটল খেত বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে এক সপ্তাহ ধরে।

একই চরের পানিবন্দি দিনমজুর মাইদুল ইসলাম (৪৮) বলেন, ঘরের ভেতর একবুক সমান পানি। তারা বাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে আছেন। তারা গেল কয়েকদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এখনো কোন ত্রাণ সহায়তা পাননি।

বন্যা পরিস্থিতির কারণে জেলার ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। দুই হাজার ৩০০ হেক্টর জমির পটল, মরিচসহ বিভিন্ন সবজি ও আমন ধানের বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল বানের পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পাকা রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কের ধরলারপাড় এলাকায় পাকা সড়কের ওপর দিয়ে নৌকা চলাচল করছে। ৪০৪টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। বন্যার্তরা উঠেছেন ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, সবদিকে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব দুর্গত পরিবারের কাছে সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এবছর বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে। বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করছেন বলে জানান।

এদিকে গতকাল বিকেলে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় কলাগাছের ভেলায় চড়ে যাওয়ার সময় দুই বোনসহ তিন জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন।

নিহতরা হলেন নাগেশ্বরী উপজেলার কালিগঞ্জ ইউনিয়নের বেগুনী পাড়া গ্রামের শাহাদাৎ হোসেনের দুই মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১১), মাছুমা আক্তার (৬) এবং একই উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ব্যাপারী পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান মুন্সির ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৪২)। দুই বোন ভেলায় করে প্রতিবেশী খালার বাড়িতে যাচ্ছিল এবং সিরাজুল ইসলাম ভেলায় চড়ে বাজারে যাচ্ছিলেন শুকনো খাবার কেনার জন্য।