ঢাকা ০৬:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ভোলা প্রেসক্লাবে গনমাধ্যম কর্মীদের সাথে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মত বিনিময়  আত্রাইয়ে মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ নাগেশ্বরী উপজেলা বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের কমিটি গঠন পত্রিকার প্রকাশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠের প্রকাশকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান পাইকগাছায় দু’পক্ষের বিরোধ ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের ৩জন গুরুতর জখম রাজবাড়ীতে শিক্ষকদের লাঞ্চিতের প্রতিবাদে মানববন্ধন গোয়ালন্দ পাক দরবার শরিফ নিয়ে গুজব ছড়ানো সংবাদের প্রতিবাদ প্রথমবারের মতো সেনাসদর পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংসদ থেকে যত টাকা খোয়া গেছে

আজ ৪ ডিসেম্বর ফুলবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস

আমিনুল ইসলাম- ফুলবাড়ী (দিনাজপুর):
  • আপডেট সময় : ০৯:১০:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ৩১২ বার পঠিত

আজ ৪ ডিসেম্বর, দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে মুক্তি বাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী উপর চতুর্মুখী আক্রমণ চালিয়ে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীকে ফুলবাড়ী থেকে বিতাড়িত করে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বীর মুক্তি বাহিনী। প্রতি বছর এই দিনটিকে ফুলবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে আসছে এই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষ।

স্থানীয় কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর ও বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানী খানসেনারা নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করে। পরদিন ২৬ মার্চ এই হত্যাযজ্ঞের খবর জানতে পেরে ফুলবাড়ীতে বাঙালিদের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ওই দিন সকালে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে ফুলবাড়ী শহরে বের করা হয় প্রতিবাদ মিছিল। ওই মিছিলে বাধা, হামলাসহ কিছু বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে অবাঙালিরা। সেই প্রতিবাদে বাঙালিরাও ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানপন্থী কয়েকজন অবাঙালির বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করেন। এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে স্বপরিবারে মারা যান অবাঙালি চিকিৎসক শওকত আলী।

এরপর ২ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ফুলবাড়ীকে নিজেদের দখলে নিয়ে নির্যাতন, হত্যা, লুটতরাজসহ ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী যৌথভাবে উপজেলার কাজিহাল, এলুয়ারী, জলপাইতলী, পানিকাটা, রুদ্রানী, আমড়া ও রানীনগর এলাকার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে এসে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে চতুর্মুখী আক্রমণ শুরু করে। এসময় মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর হাতে নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে হানাদার বাহিনী ফুলবাড়ী শহরে তাদের আগমন রুখতে ওই দিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ফুলবাড়ী শহরের পশ্চিম পার্শ্বের ছোট যমুনা নদীর ওপর লোহার ব্রিজটির পূর্বাংশ শক্তিশালী ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়। ব্রিজটি এখনও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে রয়েছে। ব্রিজটি উড়িয়ে দেওয়ায় মিত্রবাহিনীর ফুলবাড়ী শহরের প্রবেশ করতে বিলম্বের সুযোগে হানাদার বাহিনী ও তাদেও দোসর অবাঙালিরা বিশেষ ট্রেনে সৈয়দপুরে পালিয়ে যায়। সন্ধ্যার আগে ফুলবাড়ীতে প্রবেশ করে মুক্তি বাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহীনী। এসময় তারা ফুলবাড়ীকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করে পৌর শহরের সিএমবি ডাকবাংলোতে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এছার উদ্দিন বলেন, ৪ ডিসেম্বর বিকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ফুলবাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যায়। অবশ্য তাদের কিছু মাইন পুতে রাখা ছিল। সেই মাইনে বিস্ফোরিত হয়ে ৩ জন ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সদস্য শহীদ হন। ভাতীয় মিত্রবাহিনীর ওই শহীদ তিনজনকে শেষকৃত্য সম্পন্নের পর ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের পূর্বপ্রান্তে ছোট যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে তাদের সম্মানার্থে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

আজ ৪ ডিসেম্বর ফুলবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস

আপডেট সময় : ০৯:১০:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩

আজ ৪ ডিসেম্বর, দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে মুক্তি বাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী উপর চতুর্মুখী আক্রমণ চালিয়ে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীকে ফুলবাড়ী থেকে বিতাড়িত করে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বীর মুক্তি বাহিনী। প্রতি বছর এই দিনটিকে ফুলবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে আসছে এই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষ।

স্থানীয় কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর ও বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানী খানসেনারা নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করে। পরদিন ২৬ মার্চ এই হত্যাযজ্ঞের খবর জানতে পেরে ফুলবাড়ীতে বাঙালিদের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ওই দিন সকালে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে ফুলবাড়ী শহরে বের করা হয় প্রতিবাদ মিছিল। ওই মিছিলে বাধা, হামলাসহ কিছু বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে অবাঙালিরা। সেই প্রতিবাদে বাঙালিরাও ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানপন্থী কয়েকজন অবাঙালির বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করেন। এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে স্বপরিবারে মারা যান অবাঙালি চিকিৎসক শওকত আলী।

এরপর ২ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ফুলবাড়ীকে নিজেদের দখলে নিয়ে নির্যাতন, হত্যা, লুটতরাজসহ ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী যৌথভাবে উপজেলার কাজিহাল, এলুয়ারী, জলপাইতলী, পানিকাটা, রুদ্রানী, আমড়া ও রানীনগর এলাকার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে এসে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে চতুর্মুখী আক্রমণ শুরু করে। এসময় মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর হাতে নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে হানাদার বাহিনী ফুলবাড়ী শহরে তাদের আগমন রুখতে ওই দিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ফুলবাড়ী শহরের পশ্চিম পার্শ্বের ছোট যমুনা নদীর ওপর লোহার ব্রিজটির পূর্বাংশ শক্তিশালী ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়। ব্রিজটি এখনও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে রয়েছে। ব্রিজটি উড়িয়ে দেওয়ায় মিত্রবাহিনীর ফুলবাড়ী শহরের প্রবেশ করতে বিলম্বের সুযোগে হানাদার বাহিনী ও তাদেও দোসর অবাঙালিরা বিশেষ ট্রেনে সৈয়দপুরে পালিয়ে যায়। সন্ধ্যার আগে ফুলবাড়ীতে প্রবেশ করে মুক্তি বাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহীনী। এসময় তারা ফুলবাড়ীকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করে পৌর শহরের সিএমবি ডাকবাংলোতে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এছার উদ্দিন বলেন, ৪ ডিসেম্বর বিকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ফুলবাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যায়। অবশ্য তাদের কিছু মাইন পুতে রাখা ছিল। সেই মাইনে বিস্ফোরিত হয়ে ৩ জন ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সদস্য শহীদ হন। ভাতীয় মিত্রবাহিনীর ওই শহীদ তিনজনকে শেষকৃত্য সম্পন্নের পর ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের পূর্বপ্রান্তে ছোট যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে তাদের সম্মানার্থে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।