ঢাকা ১১:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে ইবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ লক্ষ্মীপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট সংস্কার সাতক্ষীরা উপকূলে বিশ্ব জলবায়ু ধর্মঘট কর্মসূচী পালিত বালিয়াকান্দিতে এ্যাসেডের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচী পালিত ভোলা প্রেসক্লাবে গনমাধ্যম কর্মীদের সাথে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মত বিনিময়  আত্রাইয়ে মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ নাগেশ্বরী উপজেলা বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের কমিটি গঠন পত্রিকার প্রকাশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠের প্রকাশকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান পাইকগাছায় দু’পক্ষের বিরোধ ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের ৩জন গুরুতর জখম

রংপুরে গ্রাহকের ৮ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা সমিতির পরিচালক ও ম্যানেজার

শিল্পী আক্তার- রংপুর:
  • আপডেট সময় : ০৬:৪০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ২৫৮ বার পঠিত

রংপুরে শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ৮ কোটি টাকা নিয়ে আত্মগোপন করার অভিযোগ উঠেছে সাকসেস বিজনেস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. নামের একটি সমিতির পরিচালক ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। পীরগাছা উপজেলার চৌধুরাণী বাজার ও পার্শ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় শাখা খুলে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে তাঁরা এ টাকা হাতিয়ে নেন। এ বিষয়ে বেশ কিছু ভুক্তভোগী পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপাড়া গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে জনি মিয়া পীরগাছা উপজেলা সমবায় অধিদপ্তর থেকে ২০১৮ সালে রেজিস্ট্রেশন করে সাকসেস বিজনেস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. নামে একটি সমিতি খোলেন। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৩৩/১৮। পরে জনি মিয়া পীরগাছা উপজেলার চৌধুরাণী বাজার ও পার্শ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ওই সমিতির শাখা খুলে ম্যানেজারসহ কর্মী নিয়োগ দেন। এসব কর্মী গ্রামে গ্রামে গিয়ে এক লাখ টাকায় প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন এলাকার মানুষজন থেকে আমানত সংগ্রহ করেন। এভাবে অভিযুক্ত জনি মিয়া সুন্দরগঞ্জ ও পীরগাছা উপজেলার শতাধিক গ্রাহকের নিকট হতে প্রায় ৮ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, সমিতিটি মানুষের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে প্রথম কয়েক মাস মুনাফা প্রদান করলেও গত ৬ মাস থেকে মুনাফা দেওয়া বন্ধ করে দেন। উপায় না পেয়ে কিছু গ্রাহক তাদের আসল টাকা ফেরতের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে কিছুদিন নানা টালবাহানা করে গা ঢাকা দেন সমিতির পরিচালক জনি মিয়া ও ম্যানেজার রাসেল মাহমুদ জীবন।

উপজেলার মকসুদ খাঁ গ্রামের ভুক্তভোগী মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমি ঢাকা শহরে মানুষের বাসায় বুয়ার কাজ করি। অনেক কষ্ট করে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। সমিতির ম্যানেজার রাসেল মাহমুদ জীবন লোভ দেখালে তাঁর মাধ্যমে আমি দুই লাখ টাকা রেখেছিলাম। প্রথম ৩ মাস আমাকে লাভ দিলেও এখন লাভ বা আসল কোনোটাই দিচ্ছে না।’

একই গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী আজিরন বেগম বলেন, ‘আমি রাস্তার মাটি কাটার কাজ করি। অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে ওই সমিতিতে ৫০ হাজার টাকা রেখেছিলাম। এখন তাঁরা আমাদের লাভ বা আসল কোনোটাই দিচ্ছে না। আমি সমিতির অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে শুনি ম্যানেজার জীবন সব টাকা তুলে নিয়ে গেছেন।’

আরেক ভুক্তভোগী ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা জরিনা বেগম বলেন, ‘আমার ভিক্ষা করে জমানো ১ লাখ টাকা সমিতির ম্যানেজার জীবন নিয়েছিল। প্রতি মাসে লাভ দেবে। এখন লাভ-আসল কিছু দিচ্ছে না। সবাই পলাতক। আমি এখন কী দিয়ে চলব।’

সরেজমিনে চৌধুরাণী বাজারে গেলে স্থানীয় হারুনুর রশিদ ও জাহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, লাখে ২ হাজার টাকা লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। টাকা নেওয়ার সময় তারা একটি ফরম পূরণ করে পাসবই দিত। এখন তারা লাপাত্তা। দরিদ্র, অসহায় মানুষদের টাকা যেন প্রশাসন উদ্ধার করে দেয় এটাই চাওয়া।

স্থানীয় কৈকুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আলম মিয়া বলেন, সমিতির নামে অনেকই সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। এরাও লাখ টাকায় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা কমিশনে লোক নিয়োগ দিয়ে এ ধরনের প্রতারণা করেছে। ওই সমিতির পরিচালক জনি মিয়া এখন পরিবারসহ পলাতক।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সমিতিটির পরিচালক জনি মিয়া ও ম্যানেজার রাসেল মাহমুদ জীবনের বাড়িতে গেলে তাঁদের কাউকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ছামছুন্নাহার বেগম বলেন, ‘আমি দুই বছর হয় এখানে এসেছি। আমি ২০২১ সালে ওই সমিতি অডিট করেছি। ২০২২ সালে আমার সহকারী করেছে। ২০২৩ সালের জেলা থেকে অডিট হওয়ার কথা। তার আগেই আমরা এসব অনিয়মের কথা জানতে পেরে তাদের নোটিশ দিতে গেলে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা কোথায় আছে কেউ বলতে পারে না। এখন আমরা অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন বলেন ওই সমিতির নামে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সমবায় কর্মকর্তা ও থানার ওসিকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যা যা করণীয় তা আমরা করব।’

ট্যাগস :

রংপুরে গ্রাহকের ৮ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা সমিতির পরিচালক ও ম্যানেজার

আপডেট সময় : ০৬:৪০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩

রংপুরে শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ৮ কোটি টাকা নিয়ে আত্মগোপন করার অভিযোগ উঠেছে সাকসেস বিজনেস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. নামের একটি সমিতির পরিচালক ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। পীরগাছা উপজেলার চৌধুরাণী বাজার ও পার্শ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় শাখা খুলে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে তাঁরা এ টাকা হাতিয়ে নেন। এ বিষয়ে বেশ কিছু ভুক্তভোগী পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপাড়া গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে জনি মিয়া পীরগাছা উপজেলা সমবায় অধিদপ্তর থেকে ২০১৮ সালে রেজিস্ট্রেশন করে সাকসেস বিজনেস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. নামে একটি সমিতি খোলেন। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৩৩/১৮। পরে জনি মিয়া পীরগাছা উপজেলার চৌধুরাণী বাজার ও পার্শ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ওই সমিতির শাখা খুলে ম্যানেজারসহ কর্মী নিয়োগ দেন। এসব কর্মী গ্রামে গ্রামে গিয়ে এক লাখ টাকায় প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন এলাকার মানুষজন থেকে আমানত সংগ্রহ করেন। এভাবে অভিযুক্ত জনি মিয়া সুন্দরগঞ্জ ও পীরগাছা উপজেলার শতাধিক গ্রাহকের নিকট হতে প্রায় ৮ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, সমিতিটি মানুষের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে প্রথম কয়েক মাস মুনাফা প্রদান করলেও গত ৬ মাস থেকে মুনাফা দেওয়া বন্ধ করে দেন। উপায় না পেয়ে কিছু গ্রাহক তাদের আসল টাকা ফেরতের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে কিছুদিন নানা টালবাহানা করে গা ঢাকা দেন সমিতির পরিচালক জনি মিয়া ও ম্যানেজার রাসেল মাহমুদ জীবন।

উপজেলার মকসুদ খাঁ গ্রামের ভুক্তভোগী মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমি ঢাকা শহরে মানুষের বাসায় বুয়ার কাজ করি। অনেক কষ্ট করে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। সমিতির ম্যানেজার রাসেল মাহমুদ জীবন লোভ দেখালে তাঁর মাধ্যমে আমি দুই লাখ টাকা রেখেছিলাম। প্রথম ৩ মাস আমাকে লাভ দিলেও এখন লাভ বা আসল কোনোটাই দিচ্ছে না।’

একই গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী আজিরন বেগম বলেন, ‘আমি রাস্তার মাটি কাটার কাজ করি। অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে ওই সমিতিতে ৫০ হাজার টাকা রেখেছিলাম। এখন তাঁরা আমাদের লাভ বা আসল কোনোটাই দিচ্ছে না। আমি সমিতির অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে শুনি ম্যানেজার জীবন সব টাকা তুলে নিয়ে গেছেন।’

আরেক ভুক্তভোগী ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা জরিনা বেগম বলেন, ‘আমার ভিক্ষা করে জমানো ১ লাখ টাকা সমিতির ম্যানেজার জীবন নিয়েছিল। প্রতি মাসে লাভ দেবে। এখন লাভ-আসল কিছু দিচ্ছে না। সবাই পলাতক। আমি এখন কী দিয়ে চলব।’

সরেজমিনে চৌধুরাণী বাজারে গেলে স্থানীয় হারুনুর রশিদ ও জাহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, লাখে ২ হাজার টাকা লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। টাকা নেওয়ার সময় তারা একটি ফরম পূরণ করে পাসবই দিত। এখন তারা লাপাত্তা। দরিদ্র, অসহায় মানুষদের টাকা যেন প্রশাসন উদ্ধার করে দেয় এটাই চাওয়া।

স্থানীয় কৈকুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আলম মিয়া বলেন, সমিতির নামে অনেকই সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। এরাও লাখ টাকায় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা কমিশনে লোক নিয়োগ দিয়ে এ ধরনের প্রতারণা করেছে। ওই সমিতির পরিচালক জনি মিয়া এখন পরিবারসহ পলাতক।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সমিতিটির পরিচালক জনি মিয়া ও ম্যানেজার রাসেল মাহমুদ জীবনের বাড়িতে গেলে তাঁদের কাউকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ছামছুন্নাহার বেগম বলেন, ‘আমি দুই বছর হয় এখানে এসেছি। আমি ২০২১ সালে ওই সমিতি অডিট করেছি। ২০২২ সালে আমার সহকারী করেছে। ২০২৩ সালের জেলা থেকে অডিট হওয়ার কথা। তার আগেই আমরা এসব অনিয়মের কথা জানতে পেরে তাদের নোটিশ দিতে গেলে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা কোথায় আছে কেউ বলতে পারে না। এখন আমরা অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন বলেন ওই সমিতির নামে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সমবায় কর্মকর্তা ও থানার ওসিকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যা যা করণীয় তা আমরা করব।’