ঢাকা ০২:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে ইবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ লক্ষ্মীপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট সংস্কার সাতক্ষীরা উপকূলে বিশ্ব জলবায়ু ধর্মঘট কর্মসূচী পালিত বালিয়াকান্দিতে এ্যাসেডের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচী পালিত ভোলা প্রেসক্লাবে গনমাধ্যম কর্মীদের সাথে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মত বিনিময়  আত্রাইয়ে মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ নাগেশ্বরী উপজেলা বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের কমিটি গঠন পত্রিকার প্রকাশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠের প্রকাশকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান পাইকগাছায় দু’পক্ষের বিরোধ ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের ৩জন গুরুতর জখম

জগৎপুর গণহত্যা দিবস আজ : ৫২ বছরেও হয়নি স্মৃতিফলক

শেখ সাইদ আহমেদ সাবাব, শেরপুর
  • আপডেট সময় : ০৬:৪৩:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৩ ৫৩ বার পঠিত

আজ ৩০ এপ্রিল শেরপুরের জগৎপুর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের জগৎপুর গ্রামে পাকবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে প্রায় ৪২ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে। আহত হয় অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ। এতে দুইশ’রও বেশি বাড়ি-ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫২ বছর পার হলেও ওই গ্রামে শহীদদের স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখতে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিফলক। করা হয়নি শহীদদের নামের তালিকা।
এখনো অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে শহীদদের গণকবর।

শনিবার (৩০ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ওই এলাকায় গণকবরের কোন চিহ্নই বোঝার উপায় নেই। স্থানীয় শহীদ পরিবারের সদস্য গণেশ চন্দ্র দে বলেন, সেদিন যুদ্ধে আমার দাদা-দাদি ও কাকা-কাকিসহ চারজনকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। পরে আমরা কোনোমতে তাদের মুখে আগুন দিয়ে গণকবর দিয়েছি। কিন্তু দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পরেও কবরগুলো পাকা হয় নাই। আমরা সরকারের কাছে গণকবরটি
পাকা করার দাবি জানাই। অর্চনা রাণী দে জানান, সংগ্রামের সময় আমার শ্বশুরকে গুলি করে মারছে। তারে এখানেই কবর দিছে। কিন্তু এখন কবরের কোন
চিহ্নই তো নাই। সব জঙ্গল হয়ে গেছে। তিনি সরকারের কাছে দ্রুত গণকবরটি সংরক্ষণের দাবি জানান। একই দাবি জানান রুনু চন্দ্র দেসহ বেশ কয়েকজন।

জানা যায়, শেরপুর শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নে জগৎপুর গ্রামের অবস্থান। ১৯৭১ সালের ওই দিনে পাক বাহিনী
আর দেশীয় দোসররা গ্রামটিকে ৩ দিক থেকে ঘিরে ফেললে গ্রামের মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশের রাঙ্গুনিয়া বিলে। সেদিনের বর্বোরোচিত হামলায়
৪২ জনের প্রাণ গেলেও ভয়াল স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও বেঁচে আছেন অনেকেই।

সেদিনের সেই ভয়াল স্মৃতিচারণ করে বেঁচে থাকা কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, সকাল ৮টার দিকে জগৎপুরের সামনের শংকরঘোষ গ্রাম থেকে স্থানীয় রাজাকার মজিবর, বেলায়েত, নজর ও কালামের সহযোগিতায় পাকবাহিনী জগৎপুরের ৩ দিক থেকে
ঘিরে ফেলে। পাক বাহিনীর ৩টি দল গ্রামের ৩ দিকে গিয়ে অবস্থান নিয়ে নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। ওইসময় গ্রামবাসী কোন কিছু না বুঝেই জীবন
বাঁচাতে গ্রামের পেছনের দিকের রাঙ্গুনিয়া বিলের দিকে দৌড়ে পালাতে থাকে।
কিন্তু বিলের মাঝখানে পানি থাকায় কেউ সাঁতরিয়ে, আবার কেউ বিলের দু’পাড় ঘেঁষে পালাতে যায়। ওই সময় শুকনো জায়গা দিয়ে পালাতে গিয়ে পাক সেনাদের
গুলিতে শহীদ হন ৪২ জন গ্রামবাসী। শুধু গুলি করে গ্রামবাসীকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি পাক সেনারা। তারা জনমানুষ শূন্য গ্রামের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ঘটনার প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর পাক সেনারা চলে গেলে কিছু কিছু গ্রামবাসী ফিরে এসে দেখে তাদের বাড়ি-ঘরের স্থলে পোড়া গন্ধ ও ছাঁই ছাড়া আর কিছুই নেই। ওই অবস্থা দেখে অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে যায়। আবার অনেকেই নাড়ীর টানে পড়ে থাকে গ্রামেই। এদিকে হিন্দু-মুসলিম অনেকেই তাদের আত্মীয়দের লাশ গ্রামের একটি জঙ্গলের কাছে গণকবর দেয়। ওই গণকবরের পাশেই বর্তমানে হিন্দুদের শ্মশান ঘাট রয়েছে। কিন্তু ওই গণকবরের স্থানে আজও স্মৃতিফলক না করায় ক্ষোভ রয়েছে গ্রামবাসীর।

জগৎপুরের কৃষক আব্দুস সামাদের ছোট ভাই আলফাজ ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পার্শ্ববর্তী একটি ব্রিজ ভাঙ্গার জন্য গ্রামের কাছাকাছি পৌঁছলে তার মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে গ্রামে ছুটে যান। ওইসময় তার সাথে ছিল আরও এক মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীনের মাসখানেক আগে স্থানীয় রাজাকাররা তার ভাই ও
ওই মুক্তিযোদ্ধাকে ডেকে নিয়ে গেলেও আজও তাদের কোন খবর পাওয়া যায়নি। ওই গ্রামের গণহত্যা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের
এম.ফিল গবেষক মো: রোকনুজ্জামান খান লিখেছেন ‘জগৎপুর গণহত্যা’। গণহত্যা নির্যাতন নির্ঘণ্ট বিষয়ক ওই গ্রন্থে একাত্তরের ৩০ এপ্রিল কারা, কীভাবে
সেই ঘৃণ্যতম গণহত্যা-নির্যাতন সংঘটিত করেছিল নির্যাতিত, ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য থেকে তা জানা যায়। জানা যায় শহীদদের নাম-পরিচয়,
নির্যাতিতদের পরিচয় এবং বধ্যভূমি সংরক্ষণ, স্মৃতিরক্ষার প্রয়াস ও বর্তমান অবস্থা। এ যেন মুক্তিযুদ্ধের মহাকাব্যের কয়েকটি রক্তভেজা পাতা, শহীদের আত্মদানের অশ্রুমাখা গাথা; সর্বোপরি মুক্তিসংগ্রামের মর্মন্তুদ কাহিনী।

কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫২ বছরেও সেখানে আজও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের অভাবে শহীদদের নাম ফলক ও গণকবরের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষায় কোন ব্যবস্থা নেয়া
হয়নি। সেইসাথে দেশের বিভিন্ন স্থানের শহীদদের তালিকা করা হলেও জগৎপুরের শহীদদের তালিকাও নেই কারও কাছে। তবে সেখানে মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম জাদুঘর,
শেরপুর সদর ইউনিটের উদ্যোগে যুদ্ধের বর্ণনা দিয়ে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের ঘোষণাসহ একটি সাইনবোর্ড বছর তিনেক আগে তোলা হলেও সেটিও বর্তমানে উল্টে
পড়ে রয়েছে।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম হিরু বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শেরপুর অঞ্চলের গণহত্যার ইতিহাসে
জগৎপুর আজও এক দগদগে ক্ষত। জগৎপুর এলাকায় সংঘটিত গণহত্যায় শহীদদের তালিকা পর্যন্ত হয়নি এখনও। এখানের কবরগুলোর চিহ্নও মুছে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। তিনি এখানের গণকবর সংরক্ষণ এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণসহ স্থানীয় রাজাকারদের বিচার দাবি করেন।

এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, জগৎপুর গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাব উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের
কাছে পাঠানো হবে।

জগৎপুর গণহত্যা দিবস আজ : ৫২ বছরেও হয়নি স্মৃতিফলক

আপডেট সময় : ০৬:৪৩:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৩

আজ ৩০ এপ্রিল শেরপুরের জগৎপুর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের জগৎপুর গ্রামে পাকবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে প্রায় ৪২ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে। আহত হয় অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ। এতে দুইশ’রও বেশি বাড়ি-ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫২ বছর পার হলেও ওই গ্রামে শহীদদের স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখতে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিফলক। করা হয়নি শহীদদের নামের তালিকা।
এখনো অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে শহীদদের গণকবর।

শনিবার (৩০ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ওই এলাকায় গণকবরের কোন চিহ্নই বোঝার উপায় নেই। স্থানীয় শহীদ পরিবারের সদস্য গণেশ চন্দ্র দে বলেন, সেদিন যুদ্ধে আমার দাদা-দাদি ও কাকা-কাকিসহ চারজনকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। পরে আমরা কোনোমতে তাদের মুখে আগুন দিয়ে গণকবর দিয়েছি। কিন্তু দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পরেও কবরগুলো পাকা হয় নাই। আমরা সরকারের কাছে গণকবরটি
পাকা করার দাবি জানাই। অর্চনা রাণী দে জানান, সংগ্রামের সময় আমার শ্বশুরকে গুলি করে মারছে। তারে এখানেই কবর দিছে। কিন্তু এখন কবরের কোন
চিহ্নই তো নাই। সব জঙ্গল হয়ে গেছে। তিনি সরকারের কাছে দ্রুত গণকবরটি সংরক্ষণের দাবি জানান। একই দাবি জানান রুনু চন্দ্র দেসহ বেশ কয়েকজন।

জানা যায়, শেরপুর শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নে জগৎপুর গ্রামের অবস্থান। ১৯৭১ সালের ওই দিনে পাক বাহিনী
আর দেশীয় দোসররা গ্রামটিকে ৩ দিক থেকে ঘিরে ফেললে গ্রামের মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশের রাঙ্গুনিয়া বিলে। সেদিনের বর্বোরোচিত হামলায়
৪২ জনের প্রাণ গেলেও ভয়াল স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও বেঁচে আছেন অনেকেই।

সেদিনের সেই ভয়াল স্মৃতিচারণ করে বেঁচে থাকা কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, সকাল ৮টার দিকে জগৎপুরের সামনের শংকরঘোষ গ্রাম থেকে স্থানীয় রাজাকার মজিবর, বেলায়েত, নজর ও কালামের সহযোগিতায় পাকবাহিনী জগৎপুরের ৩ দিক থেকে
ঘিরে ফেলে। পাক বাহিনীর ৩টি দল গ্রামের ৩ দিকে গিয়ে অবস্থান নিয়ে নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। ওইসময় গ্রামবাসী কোন কিছু না বুঝেই জীবন
বাঁচাতে গ্রামের পেছনের দিকের রাঙ্গুনিয়া বিলের দিকে দৌড়ে পালাতে থাকে।
কিন্তু বিলের মাঝখানে পানি থাকায় কেউ সাঁতরিয়ে, আবার কেউ বিলের দু’পাড় ঘেঁষে পালাতে যায়। ওই সময় শুকনো জায়গা দিয়ে পালাতে গিয়ে পাক সেনাদের
গুলিতে শহীদ হন ৪২ জন গ্রামবাসী। শুধু গুলি করে গ্রামবাসীকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি পাক সেনারা। তারা জনমানুষ শূন্য গ্রামের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ঘটনার প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর পাক সেনারা চলে গেলে কিছু কিছু গ্রামবাসী ফিরে এসে দেখে তাদের বাড়ি-ঘরের স্থলে পোড়া গন্ধ ও ছাঁই ছাড়া আর কিছুই নেই। ওই অবস্থা দেখে অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে যায়। আবার অনেকেই নাড়ীর টানে পড়ে থাকে গ্রামেই। এদিকে হিন্দু-মুসলিম অনেকেই তাদের আত্মীয়দের লাশ গ্রামের একটি জঙ্গলের কাছে গণকবর দেয়। ওই গণকবরের পাশেই বর্তমানে হিন্দুদের শ্মশান ঘাট রয়েছে। কিন্তু ওই গণকবরের স্থানে আজও স্মৃতিফলক না করায় ক্ষোভ রয়েছে গ্রামবাসীর।

জগৎপুরের কৃষক আব্দুস সামাদের ছোট ভাই আলফাজ ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পার্শ্ববর্তী একটি ব্রিজ ভাঙ্গার জন্য গ্রামের কাছাকাছি পৌঁছলে তার মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে গ্রামে ছুটে যান। ওইসময় তার সাথে ছিল আরও এক মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীনের মাসখানেক আগে স্থানীয় রাজাকাররা তার ভাই ও
ওই মুক্তিযোদ্ধাকে ডেকে নিয়ে গেলেও আজও তাদের কোন খবর পাওয়া যায়নি। ওই গ্রামের গণহত্যা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের
এম.ফিল গবেষক মো: রোকনুজ্জামান খান লিখেছেন ‘জগৎপুর গণহত্যা’। গণহত্যা নির্যাতন নির্ঘণ্ট বিষয়ক ওই গ্রন্থে একাত্তরের ৩০ এপ্রিল কারা, কীভাবে
সেই ঘৃণ্যতম গণহত্যা-নির্যাতন সংঘটিত করেছিল নির্যাতিত, ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য থেকে তা জানা যায়। জানা যায় শহীদদের নাম-পরিচয়,
নির্যাতিতদের পরিচয় এবং বধ্যভূমি সংরক্ষণ, স্মৃতিরক্ষার প্রয়াস ও বর্তমান অবস্থা। এ যেন মুক্তিযুদ্ধের মহাকাব্যের কয়েকটি রক্তভেজা পাতা, শহীদের আত্মদানের অশ্রুমাখা গাথা; সর্বোপরি মুক্তিসংগ্রামের মর্মন্তুদ কাহিনী।

কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫২ বছরেও সেখানে আজও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের অভাবে শহীদদের নাম ফলক ও গণকবরের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষায় কোন ব্যবস্থা নেয়া
হয়নি। সেইসাথে দেশের বিভিন্ন স্থানের শহীদদের তালিকা করা হলেও জগৎপুরের শহীদদের তালিকাও নেই কারও কাছে। তবে সেখানে মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম জাদুঘর,
শেরপুর সদর ইউনিটের উদ্যোগে যুদ্ধের বর্ণনা দিয়ে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের ঘোষণাসহ একটি সাইনবোর্ড বছর তিনেক আগে তোলা হলেও সেটিও বর্তমানে উল্টে
পড়ে রয়েছে।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম হিরু বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শেরপুর অঞ্চলের গণহত্যার ইতিহাসে
জগৎপুর আজও এক দগদগে ক্ষত। জগৎপুর এলাকায় সংঘটিত গণহত্যায় শহীদদের তালিকা পর্যন্ত হয়নি এখনও। এখানের কবরগুলোর চিহ্নও মুছে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। তিনি এখানের গণকবর সংরক্ষণ এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণসহ স্থানীয় রাজাকারদের বিচার দাবি করেন।

এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, জগৎপুর গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাব উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের
কাছে পাঠানো হবে।